জাতীয়

নতুন জনপ্রশাসন সচিব হলেন মো. এহসানুল হক

Advertisement

বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নতুন সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মো. এহসানুল হক। তিনি এর আগে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রোববার (১২ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনে তার এই নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। অর্থাৎ, আজ থেকেই মো. এহসানুল হক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন।

জনপ্রশাসনে নেতৃত্বে নতুন মুখ

বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বলা হয় “প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র”। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, নীতিমালা প্রণয়নসহ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাঠামোর মূল কার্যক্রম এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়।
সেই জায়গায় নতুন নেতৃত্ব হিসেবে মো. এহসানুল হকের আগমনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তার দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে মন্ত্রণালয়টি আবারও পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমানকে গত ২১ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বদলি করা হয়। তার বিদায়ের পর থেকে অতিরিক্ত সচিব ড. আবু শাহীন মো. আসাদুজ্জামান রুটিন দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এহসানুল হকের কর্মজীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

মো. এহসানুল হক একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগ দেন নব্বইয়ের দশকের শুরুতে।

তার কর্মজীবনের মধ্যে জেলা প্রশাসক, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বিভাগীয় কমিশনার এবং পরবর্তীতে সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি দেশের সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, মহাসড়ক সম্প্রসারণ, সেতু নির্মাণ প্রকল্প তত্ত্বাবধানসহ নানা বড় প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে পদ্মা সেতু সংযোগ সড়ক ও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের বাস্তবায়নে তার প্রশাসনিক ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বের গুরুত্ব

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের “মেরুদণ্ড” হিসেবে বিবেচিত। সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর এবং মাঠ প্রশাসনের কাঠামো এই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

একজন সিনিয়র সচিবের দায়িত্ব শুধুমাত্র প্রশাসনিক নয়, বরং নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা ও সংস্কারের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মো. এহসানুল হকের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা এবং দক্ষ নেতৃত্ব মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে নতুন গতি আনবে।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ: সরকারের আস্থার প্রতিফলন

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে প্রজ্ঞাপনটি জারি করেছে, তাতে উল্লেখ রয়েছে—এহসানুল হককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সিনিয়র সচিব করা হয়েছে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সাধারণত সেইসব কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়, যাদের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের প্রতি সরকারের বিশেষ আস্থা থাকে।

এটি সরকারের এক ধরনের কৌশল, যাতে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা অবসরের পরও গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে রাষ্ট্রীয় কাজে অবদান রাখতে পারেন।
তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে সরকার প্রশাসনে এমন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ আমলাকে দায়িত্বে রেখেছে।

প্রশাসনে সংস্কার ও চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ—

  • সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি
  • প্রশাসনে ডিজিটাল রূপান্তর
  • নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা
  • নাগরিক সেবা সহজীকরণ

এই গুরুত্বপূর্ণ সময়েই নতুন সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন মো. এহসানুল হক।
তার অভিজ্ঞতা ও বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গি প্রশাসনিক সংস্কারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি প্রশাসনে ডিজিটাল রূপান্তর

বর্তমান সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এই উদ্যোগের অন্যতম বড় অংশীদার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ই-ফাইলিং, অনলাইন পদোন্নতি প্রক্রিয়া, ডিজিটাল পারফরম্যান্স মূল্যায়ন, এবং সরকারি দপ্তরে কাগজবিহীন প্রশাসনের মতো প্রকল্পগুলো ইতোমধ্যে বাস্তবায়নের পথে।

মো. এহসানুল হক নিজেও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর প্রশাসন ব্যবস্থার পক্ষে। তার নেতৃত্বে এই রূপান্তর আরও দ্রুত হবে বলে প্রশাসনিক মহলে আশা তৈরি হয়েছে।

কর্মজীবনে স্বচ্ছতা ও সুনামের জন্য পরিচিত

যারা তার সঙ্গে কাজ করেছেন, তারা বলেন—এহসানুল হক একজন শান্ত, দায়িত্বশীল এবং নীতি-নিষ্ঠ কর্মকর্তা।
তিনি সবসময় স্বচ্ছতা ও দলগত কাজকে অগ্রাধিকার দেন।
সড়ক পরিবহন বিভাগে তার নেতৃত্বে বহু জটিল প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে।
সরকারি প্রশাসনে যে পেশাদারিত্ব ও সেবা মনোভাবের প্রয়োজন, তা তার মধ্যে বিদ্যমান বলে অনেকে মনে করেন।

প্রশাসনিক মহলে প্রতিক্রিয়া

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব নিয়োগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই প্রশাসনিক মহলে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তার অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব দক্ষতা মন্ত্রণালয়ের স্থবিরতা দূর করে কার্যক্রমে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে।

একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন,

“এহসানুল হক স্যার মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের প্রতিটি ধাপে অভিজ্ঞ। তার মতো একজন দক্ষ আমলার হাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আরও শক্তিশালী হবে।”

জনপ্রশাসনে নারী ও তরুণ নেতৃত্ব বিকাশের পরিকল্পনা

নতুন সচিব দায়িত্ব নেওয়ার পর মন্ত্রণালয়ে যে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—

  • তরুণ কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব বিকাশ
  • প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি
  • নীতি নির্ধারণে গবেষণাভিত্তিক সিদ্ধান্ত
  • জেলা পর্যায়ে সেবা কার্যক্রমের দক্ষতা বৃদ্ধি

এহসানুল হক বিশ্বাস করেন, একটি কার্যকর প্রশাসন গঠনের জন্য অভিজ্ঞদের পাশাপাশি তরুণ কর্মকর্তাদের নতুন ধারণা ও উদ্যমকে কাজে লাগাতে হবে।

জাতীয় প্রশাসন একাডেমি ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় নতুন দৃষ্টি

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার (বিপিএটিসি) কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির কাজ করে থাকে।
এখানেও তিনি নতুনত্ব আনতে চান। সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক মান ও নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

আগামী দিনের প্রত্যাশা

নতুন জনপ্রশাসন সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে মো. এহসানুল হক এখন সরকারের প্রশাসনিক রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে।
তার নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় আরও দক্ষ, আধুনিক ও নাগরিকমুখী হবে—এমনটাই আশা করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তার উপস্থিতি সরকারের চলমান সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি আনবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রশাসনে প্রতিটি সচিব পরিবর্তন শুধু একটি পদোন্নতি নয়—এটি রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণের দিকনির্দেশনাও নির্ধারণ করে।
মো. এহসানুল হকের নিয়োগ সেই ধারাবাহিকতার অংশ, তবে তার পেশাগত অভিজ্ঞতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা এই নিয়োগকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।

দেশ এখন উন্নয়ন ও প্রশাসনিক রূপান্তরের মোড় ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।
এমন সময়ে একজন অভিজ্ঞ, কর্মঠ ও দূরদর্শী কর্মকর্তার হাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দায়িত্বে আসা—রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন সম্ভাবনার বার্তা বহন করছে।

MAH – 13275 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button