
পঞ্চগড়ের সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের নির্যাতন ও শোষণের দিন শেষ। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও স্বার্থান্বেষী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দাঁড়াচ্ছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে তেঁতুলিয়ার ঐতিহাসিক তেঁতুল তলায় অনুষ্ঠিত এক পথসভায় তিনি জানান,
“রাজাদের দাসত্ব আর মেনে চলবেন না সাধারণ মানুষ। এখন হিসাব নেয়ার সময় এসেছে।”
চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান
সারজিস আলম বলেন, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এনসিপি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে। তিনি উল্লেখ করেন, “পঞ্চগড় জেলা প্রকৃতির সৌন্দর্য ও পর্যটন সম্পদের জন্য বিখ্যাত। সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার উপর জুলুম চালিয়ে সুবিধা ভোগী কিছু মানুষ নিজেদের আখের গুছিয়ে আসছে। এনসিপি সাধারণ মানুষের জন্য এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে।”
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি করে যারা দীর্ঘদিন ফায়দা লুটেছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে। তেঁতুলিয়ার ভূসম্পদ সরকারী ইজারায় হবে এবং কোন সুবিধাভোগীর হাতে থাকবে না। কতিপয় ব্যক্তির অযৌক্তিক রামরাজত্ব আর চলতে দেওয়া হবে না। প্রশাসন চলবে জনগণের স্বার্থে।
লংমার্চের বিস্তৃত পথ
লংমার্চটি পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী, চাকলাহাট, হাড়িভাসা, হাফিজাবাদ, অমরখানা, সাতমেরা, তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর, ভজনপুর, বুড়াবুড়ি, শালবাহান, তেঁতুলিয়া ও তিরনইহাট ইউনিয়ন অতিক্রম করে বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে গিয়ে শেষ হয়।
পথিমধ্যে তেঁতুলিয়া চৌরাস্তায় প্রথম পথসভা এবং বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সিপাইপাড়া বাজারে দ্বিতীয় পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় পথসভায় বক্তব্য রাখেন সারজিস আলম।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা লংমার্চে অংশগ্রহণ করে দুর্নীতিবিরোধী নানা স্লোগান লেখা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে। একাধিক সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের জানান, “আমাদের অধিকার ফিরে পেতে হবে। যারা আমাদের জীবন নষ্ট করেছে তাদের হিসাব দিতে হবে।”
সারজিস আলম বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াব। যারা দীর্ঘদিন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, তাদের অব্যাহতি নেই। জনগণের স্বার্থে প্রশাসন কাজ করবে।”
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
পঞ্চগড়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, সাধারণ মানুষ নিজের অধিকার ফেরত পাওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী আন্দোলনের প্রয়োজন।
সারজিস আলমের নেতৃত্বে এই লংমার্চের মাধ্যমে এনসিপি সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটি স্থানীয় রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
গণতান্ত্রিক চাপে প্রশাসনের পরিবর্তন
বিশ্লেষকরা বলেন, স্থানীয় জনগণের চাপে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কার্যক্রম পুনর্বিবেচনা করতে হবে। সারজিস আলমের নেতৃত্বে এই ধরনের পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতায়নের বার্তা দিচ্ছে।
একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “যে কেউ দীর্ঘদিন ধরে জনগণের স্বার্থহীন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে জনমুখী আন্দোলন বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এনসিপি এই আন্দোলনকে একটি সংগঠিত এবং দিকনির্দেশনা দেওয়ার প্রচেষ্টা করছে।”
পঞ্চগড়ে সারজিস আলমের নেতৃত্বে এই লংমার্চ সাধারণ মানুষের জন্য একটি প্রতীকী বার্তা হিসেবে দাঁড়াচ্ছে। দীর্ঘদিনের শোষণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণমানুষের আন্দোলন দৃঢ় হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, প্রশাসন এবং ক্ষমতাধারীরা কীভাবে এই নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মানিয়ে নেবে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, “পরবর্তী ধাপের প্রতিক্রিয়া পুরো জেলার রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশে প্রভাব ফেলতে পারে।” সাধারণ মানুষ এবার শুধু দেখার নয়, সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের অধিকার ফিরিয়ে নিতে চাইছে।
এম আর এম – ১৭২০,Signalbd.com