
বাংলাদেশের সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে সাইবার হামলার শঙ্কা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সম্প্রতি বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেবিচক দেশের বিমান পরিবহন কার্যক্রমকে নিরাপদ রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে।
বেবিচকের নির্দেশনা ও সতর্কতা
বেবিচক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের হিথ্রো, বেলজিয়ামের ব্রাসেলস এবং জার্মানির বার্লিন বিমানবন্দরে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার প্রভাব হিসেবে শত শত ফ্লাইট বাতিল হয়। এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশের বিমানবন্দরেও ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
বেবিচকের পক্ষ থেকে দেশের সব বিমানবন্দরের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ১০টি বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- শক্তিশালী ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা এবং নিয়মিত পরিবর্তন করা
- সন্দেহজনক ই-মেইল বা অজানা লিংকে ক্লিক থেকে বিরত থাকা
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সন্দেহজনক লিংক ও অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক না করা
- সফটওয়্যার, অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যান্টিভাইরাস নিয়মিত আপডেট রাখা
- পাইরেটেড বা ক্র্যাকড সফটওয়্যার ব্যবহার না করা
- অফিসিয়াল ডিভাইসে ব্যক্তিগত অ্যাপ ইনস্টল না করা
- মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (MFA) চালু করা
- দাপ্তরিক কাজে বেবিচকের ই-মেইল (caab.gov.bd) ব্যবহার করা
- গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিয়মিত ব্যাকআপ রাখা
- পেনড্রাইভ স্ক্যান ব্যতিরেকে ব্যবহার না করা
যেকোনো ধরনের সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি বা ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে বেবিচকের সিএএবি সার্ট (CAAB-CERT) টিম, আইটি বিভাগ এবং জাতীয় সাইবার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমকে জানানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
দেশের বিমানবন্দরগুলোতে বর্তমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও কিছু ক্ষেত্রে তা পুরনো বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন। বেবিচক এই পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার জন্য দ্রুত একটি অভিজ্ঞ কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে বিমানবন্দরগুলোর সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর বেবিচকের প্রধান কার্যালয়ে সাইবার হামলার ঝুঁকি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বলা হয়, লন্ডনের কয়েকটি বিমানবন্দরে সাইবার হামলার কারণে ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও আগাম সতর্কতা হিসেবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রভাব ও সম্ভাব্য ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার হামলা হলে বিমানবন্দর পরিচালনায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। ফ্লাইট বাতিল, যাত্রীদের বিরক্তি, এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, যাত্রীর ব্যক্তিগত তথ্য ও দাপ্তরিক তথ্যের নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বেবিচকের এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা যাত্রীদের জন্য সরাসরি প্রভাব ফেলে না, তবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও অব্যাহত বিমান পরিবহন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি
ইউরোপের বিমানবন্দরগুলোতে সাইবার হামলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা হিসাবে কাজ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং বিমানবন্দরগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি অনুযায়ী হালনাগাদ রাখা অত্যন্ত জরুরি।
বেবিচক ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ হাইকমিশনের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্টেশন (DFT) সহযোগিতায় নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। ২০ জন বেবিচক কর্মকর্তা এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, যা দেশের সাইবার নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক মতামত
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিমানবন্দরগুলোতে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার না হলে দেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সুনাম ঝুঁকিতে পড়বে। ড. আনিসুর রহমান, একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক, বলেন, “বিমানবন্দর সাইবার হামলার শিকার হলে শুধু যাত্রী নয়, দেশের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমও প্রভাবিত হবে। এই ধরনের সতর্কতা এখনই গ্রহণ করা অপরিহার্য।”
বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে সাইবার হামলার সম্ভাবনা মোকাবিলায় বেবিচকের উদ্যোগ দেশের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। ১০টি বিশেষ নির্দেশনা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বিমান পরিবহন নিরাপত্তাকে আরও দৃঢ় করবে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, অব্যাহত নজরদারি ও প্রযুক্তি হালনাগাদ নিশ্চিত না হলে ঝুঁকি এখনও রয়ে গেছে।
এম আর এম – ১৭০৪,Signalbd.com