বিশ্ব

ইসরায়েল এবং গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী আমার প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছে : ট্রাম্প

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাতের মধ্যে থাকা ইসরায়েল এবং গাজা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস তার প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের জন্য স্বাক্ষর করেছে। এই ঘোষণা তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দিয়েছেন।

ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের প্রথম ধাপে দ্রুতই সমস্ত জিম্মি মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েল গাজা থেকে সাময়িকভাবে সেনা প্রত্যাহার করবে। তিনি বলেন, “আমি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপের শর্তাবলী মেনে স্বাক্ষর করেছে। খুব শিগগিরই জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে এবং গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে।”

কাতারও নিশ্চিত করল যুদ্ধবিরতি চুক্তি

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের অন্যতম মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারও এই চুক্তি নিশ্চিত করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেছেন, “আজ রাতে গাজায় শান্তি স্থাপনের নতুন পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের শর্তাবলী ও বিধান বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটবে, সমস্ত ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি জিম্মি মুক্তি পাবে, এবং ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশে আর কোনো বাধা থাকবে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, চুক্তির বিস্তারিত শর্তাবলী পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে।

ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস ঘোষণা

গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এ সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্প বলেন, গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তাবিত পরিকল্পনার নথি ইতোমধ্যেই ইসরায়েল, হামাস, মিসর ও কাতারের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে গেছে। তবে হামাস তখনো সমর্থন দেয়নি।

পরবর্তীতে ৩ অক্টোবর হামাস সম্মতি প্রদান করে। একদিন পরে, ৪ অক্টোবর, ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ৬ অক্টোবর মিসরের লোহিত সাগর তীরবর্তী পর্যটন শহর শারম আল শেখে বৈঠক শুরু হয়, যেখানে ইসরায়েল, হামাস, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। দুই দিনেরও বেশি আলোচনা শেষে উভয় পক্ষ প্রথম পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাক্ষর করে।

যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপট

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন নয়। গত দুই বছর ধরে গাজা উপত্যকায় সংঘর্ষ এবং বোমাবর্ষণ চলছিল। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, শতাধিক আহত হয়েছে, এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি স্থাপনের জন্য বিভিন্ন দেশের প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু কার্যকর সমঝোতা সম্ভব হয়নি।

এবারের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চুক্তি বাস্তবায়ন হলে গাজার মানুষদের পুনর্বাসন, ত্রাণ সরবরাহ, এবং সীমান্তে সাধারণ জীবনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা সহজ হবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

চুক্তি ঘোষণার পরই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে স্বস্তিদায়ক প্রতিক্রিয়া এসেছে। সংযুক্ত রাষ্ট্র, মিসর ও কাতার সহ অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এই সিদ্ধান্তকে প্রশংসা করেছে। বিশেষ করে কাতার এবং মিসর যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের নাগরিকদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম ধাপের সফল বাস্তবায়ন ভবিষ্যতে স্থায়ী শান্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ট্রাম্পের মন্তব্য

ট্রাম্প এই বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, তিনি বলেন, “আমার জানা অনুযায়ী আলোচনাটি ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে। এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আমি এই সপ্তাহের শেষের দিকে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে পারি, সম্ভবত রোববার।” ট্রাম্পের এ মন্তব্য যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় তার সক্রিয় মধ্যস্থতার প্রতিফলন।

শান্তি পরিকল্পনার মূল বিষয়বস্তু

নতুন যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:

  1. জিম্মি মুক্তি: সমস্ত ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে।
  2. সেনা প্রত্যাহার: ইসরায়েল গাজা থেকে সাময়িকভাবে সেনা প্রত্যাহার করবে।
  3. ত্রাণ সরবরাহ: গাজায় ত্রাণ সামগ্রী অবাধ প্রবেশের সুযোগ তৈরি হবে।
  4. পর্যবেক্ষণ: চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধায়ক থাকবে।
  5. পরবর্তী আলোচনা: স্থায়ী শান্তি ও সীমান্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্

ইন্টারন্যাশনাল পিস ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই প্রথম ধাপের বাস্তবায়ন সফল হলে গাজার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে। যুদ্ধবিরতি শুধু অস্ত্রবিরতি নয়, বরং মানবিক পরিস্থিতি উন্নত করার সুযোগও প্রদান করছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান সংঘাতের সমাধান, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির নতুন আশা জাগিয়েছে। চুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তদারকি মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনতে পারে।

MAH – 13246 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button