রাজনীতি

বিএনপি নেতার হুমকি – ‘প্রস্তুত থাকেন, প্রত্যেকটা মামলায় আপনি আসামি হবেন’

Advertisement

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে জেলা প্রতিনিধি আশিকুর রহমানকে ফোনে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি নেতা ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার মতিউর রহমান সাগরের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি আশিকুরকে বলেন, “প্রস্তুত থাকেন, প্রত্যেকটা মামলায় আপনি আসামি হবেন।”

হুমকির ঘটনা ও সময়

গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতের দিকে অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের পর হুমকি দেওয়া হয়। সংবাদে নড়িয়া উপজেলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে অনিয়মের তথ্য প্রকাশিত হয়। হুমকিতে রাজনৈতিক আক্রমণাত্মক মন্তব্য এবং গালিগালাজ করার অভিযোগও রয়েছে।

আশিকুর রহমান জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা করছেন। সরকারি খাদ্য কর্মসূচিতে অনিয়মের খবর প্রকাশের কারণে এই হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং থানায় জিডি করেছেন।

অভিযোগের প্রেক্ষাপট

সংবাদটি প্রকাশের আগে উপজেলা প্রশাসনের তদন্তে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। ২১ আগস্ট ইউএনও মতিউরকে নোটিশ দেন। ২৭ আগস্ট স্থানীয় সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। ২৮ আগস্ট সরেজমিনে বিক্রয় কেন্দ্রে ৩৫৫ কেজি চাল কম পাওয়া যায়। ৩১ আগস্ট তার গুদামে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়।

খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন পাঠানোর পর ২৪ সেপ্টেম্বর মতিউর রহমানের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়। এর পরই হুমকির ঘটনা ঘটে।

সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা ও নিরাপত্তা

আশিকুর রহমান বলেন, “আমি দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করছি। সরকারি খাদ্য কর্মসূচির অনিয়ম প্রকাশ করায় আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখন দেখছি পুলিশ প্রশাসন কী উদ্যোগ নেয়।” তিনি প্রশাসনের কাছে তার নিরাপত্তা চেয়েছেন।

স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, এই ধরনের হুমকি সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি।

বিএনপি নেতার প্রতিক্রিয়া

মতিউর রহমান সাগর দাবি করেছেন, তিনি কাউকে হুমকি দেননি বা গালিগালাজ করেননি। তিনি বলেন, “আশিকুর আগে ছাত্রলীগ করত, এখন সাংবাদিক সেজে মিথ্যা সংবাদ করছে। আমি শুধু বলেছি, এসব মিথ্যা লেখা বন্ধ করতে।”

নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রয়েল মাঝি জানান, জেলা বিএনপির নির্দেশে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সভাপতিত্ব করবেন জাহাঙ্গীর আলম কাসেম।

প্রশাসনের পদক্ষেপ

ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল হাসান জানান, হুমকির বিষয়ে জিডি করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা প্রশাসনও পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখছে এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

প্রভাব ও বিশ্লেষণ

এ ধরনের ঘটনা শুধু একজন সাংবাদিককে নয়, পুরো সাংবাদিক সমাজকে আতঙ্কিত করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রভাব এবং সরকারি প্রকল্পে অনিয়মের খবর প্রকাশ করা হলে সাংবাদিকদের ওপর চাপ তৈরি করা হচ্ছে। এটি তথ্যের স্বাধীনতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত না হলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।

শরীয়তপুরে আশিকুর রহমানকে ফোনে হুমকি দেওয়ার ঘটনা দেশের সাংবাদিক সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই ধরনের হুমকি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্বাধীন সংবাদ প্রচারের পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এম আর এম – ১৬৯৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button