
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের দুকুমে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে সাতজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, নিহতরা সাগরে মাছ ধরার কাজ শেষে মাইক্রোবাসে ফিরে আসছিলেন। দুর্ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত
ওমানের স্থানীয় সময় বিকেলে ঘটে এই সড়ক দুর্ঘটনা। নিহতদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুমড়েমুচড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে সাতজন বাংলাদেশি ছিলেন এবং তারা সরাসরি নিহত হন।
মরদেহগুলো বর্তমানে দুকুম হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন—বাবলু, সাহাবুদ্দিন, আমিন সাওদাগর, আরজু ও রকি।
নিহতদের পরিচয় ও পরিবারিক প্রেক্ষাপট
নিহতরা সবাই চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী জীবন যাপন করছিলেন। প্রতিদিনের জীবিকার জন্য সাগরে মাছ ধরা তাদের পেশা ছিল।
নিহতদের পরিবারগুলো গভীর শোকের মধ্যে রয়েছে। অনেকেই স্থানীয় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিহতদের স্মরণ এবং শোক প্রকাশ করেছেন। পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, দুর্ঘটনায় কেউ বাঁচতে পারেনি।
দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট ও সাধারণ তথ্য
ওমানে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা অনেক। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরে দেশটি বাংলাদেশের শ্রমবাজারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাছ ধরার কাজে এবং অন্যান্য সেবা খাতে বহু প্রবাসী সেখানে কাজ করছেন।
ওমানে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা একেবারে নতুন নয়। সড়ক নিরাপত্তা মান কম হওয়া, যানবাহনের অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
ওমানের স্থানীয় পুলিশ ও জরুরি পরিষেবা দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তারা আহতদের উদ্ধার এবং নিহতদের মরদেহ মর্গে প্রেরণ করেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসও মৃতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছে। প্রবাসী কল্যাণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদারকি করছে দূতাবাস।
প্রভাব ও পরবর্তী পদক্ষেপ
এই দুর্ঘটনা প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ও শোকের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সন্দ্বীপ উপজেলার প্রবাসীরা আতঙ্কিত। দুর্ঘটনার পর প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা ও স্থানীয় সংগঠনগুলো প্রবাসীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীদের নিরাপত্তা ও সড়ক ব্যবহার সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রবাসী শ্রমিকরা যাতে নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারে, তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও দূতাবাসের উদ্যোগ প্রয়োজন।
পূর্ব অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণ
গত বছরও ওমানে কয়েকটি বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গাড়ি সংক্রান্ত মান ও নিয়মাবলী কঠোরভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
অর্থনৈতিক চাপের কারণে প্রবাসীরা দীর্ঘ সময় ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন। এ ধরনের পরিস্থিতি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া প্রবাসীদের জীবনঝুঁকি বাড়ছে।
ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় সাতজন প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু একটি গভীর মানবিক ক্ষতি। পরিবারের শোক, প্রবাসী সম্প্রদায়ের উদ্বেগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বসহ বিষয়গুলো গুরুত্ব বহন করছে।
প্রবাসী নিরাপত্তা ও সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে নিয়মিত সচেতনতা, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রবাসী কল্যাণে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া অপরিহার্য।
এম আর এম – ১৬৮৬,Signalbd.com