
নওগাঁর পোরশা উপজেলার একটি মাদরাসায় হোস্টেলের রাতের খাবার খাওয়ার পর অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে হেফজ, কুতুবখানা ও পাঠাগার বিভাগের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বয়স ৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। আহতদের মধ্যে ৬৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
মাদরাসার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা ভাত, সবজি, মাছের তরকারি ও ডাল খেয়েছিল। রাতের খাবার খাওয়ার পর মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পেটে ব্যথা, বমি এবং ডায়রিয়ার সমস্যা শুরু হয়।
প্রাথমিকভাবে ২০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে আরও ৪৩ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৩।
মাদরাসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, একই খাবার ১,৬০০ আবাসিক শিক্ষার্থী ও প্রায় শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীও খেয়েছেন। তবে তারা অল্প কিছু অসুস্থতা ছাড়া স্বাভাবিক আছেন। ধারণা করা হচ্ছে ডাল বা তরকারিতে কোনো কারণে বিষক্রিয়া হয়েছে।
‘আল-জামিয়া-আল আরাবিয়া দারুল হিদায়াহ’ মাদরাসায় প্রায় ১,৬০০ আবাসিক শিক্ষার্থী এবং প্রায় শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এটি এলাকার একটি সুপরিচিত ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মাদরাসার হোস্টেল ও আবাসিক খাবারের মান নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তবে এই ঘটনার পরে খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি আরও কড়া করার প্রয়োজনীয়তা উঠেছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর আগামী ১০ দিনের জন্য মাদরাসায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাজির আহম্মেদ জানান, শিক্ষার্থীরা একই ধরনের লক্ষণ নিয়ে অসুস্থ হয়েছেন। ডায়রিয়াজনিত সমস্যা হওয়ায় সবাই হাসপাতালে ভর্তি। তবে সবাই এখন আশঙ্কামুক্ত।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাকিবুল ইসলাম জানান, ঘটনা তদন্তের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। এছাড়া তারা খাবারের মান ও নিরাপত্তা নিয়ে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চান।
খাবারের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বড় প্রতিষ্ঠানে খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবিধি অপরিহার্য। এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বলেন, ভবিষ্যতে খাবারের মান পরীক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন করা হবে। হাসপাতাল থেকে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিকভাবে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ কমিটির মাধ্যমে ঘটনার কারণ নির্ণয় করবেন। প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, ডাল বা তরকারিতে কোনোভাবে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্ত শেষে যদি খাবারের মান বা স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করা হয়ে থাকে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা চলছে। এছাড়া স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে।
সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় লোকজন ও অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। অনেকেই মন্তব্য করেছেন, বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খাবারের মান নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
কিছু অভিভাবক মনে করছেন, এই ঘটনা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দিক থেকে সতর্কবার্তা। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি এড়াতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন।
নওগাঁর মাদরাসায় হোস্টেলের খাবার খাওয়ার পর অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর অসুস্থ হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে। বর্তমানে সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তদন্ত শেষে সঠিক কারণ জানা গেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এম আর এম – ১৬৮৩,Signalbd.com