বিশ্ব

মিশরে গাজা শান্তি আলোচনায় ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার

Advertisement

মিশরে চলমান গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার যোগ দিচ্ছেন। ইসরাইল ও হামাসের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা এবং সংঘাতের মধ্যে শান্তির সম্ভাবনা নিয়ে নতুন আশার আলো জাগাচ্ছে। খবর জানিয়েছে বিবিসি।

মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত পরোক্ষ আলোচনার দ্বিতীয় দিনে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, আলোচনার পেছনে লক্ষ্য হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি এবং গাজার মধ্যে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পথ তৈরি করা।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী মুখ্য ব্যক্তিরা

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানিও আলোচনায় যোগ দেবেন। এছাড়াও তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধানও বৈঠকে উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল এবং ট্রাম্পের জামাতার উপস্থিতি এই আলোচনাকে আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূৰ্ণ করে তুলেছে।

হামাসের চাওয়া ও ইসরাইলের দৃষ্টিভঙ্গি

হামাস চাচ্ছে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা হোক এবং ইসরাইল তাদের সেনা প্রত্যাহার করুক। তারা নিশ্চিত হতে চায় যে ভবিষ্যতে আবারও ইসরাইল যুদ্ধ শুরু করবে না। তবে এই বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কিছু মতবিরোধ রয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আলোচনা চলাকালীন কোনো বিস্তারিত মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু দেশবাসীকে জানিয়েছেন, তারা “সিদ্ধান্তের ভাগ্যনির্ধারণী দিনগুলোর” মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ইঙ্গিত দেয় যে ইসরাইলের সরকার যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সম্ভাবনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্য একটি ২০ দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিলেন। ট্রাম্প আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা রয়েছে।” এই পরিকল্পনায় মূলত তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা, মানবিক সাহায্য পৌঁছানো এবং স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে সংঘাত হ্রাস করার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই উদ্যোগ কেবল যুদ্ধবিরতি নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সমাধানের দিকে মনোযোগী। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে মানবিক অবকাঠামো পুনর্গঠন, খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ, এবং গাজার বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আলোচনার প্রেক্ষাপট

ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত চলছেই। ২০২৩ সালের অক্টোবরের শুরুতে হামাসের হামলার দুই বছর পূর্ণ হলো ৭ অক্টোবর। এই দিনে ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছিলেন যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়। সকাল থেকে চলা অধিবেশনটি কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। কর্মকর্তার কথায়, “গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চাইছে হামাস। তবে ইসরাইল যাতে আবার যুদ্ধ শুরু না করে তা নিশ্চিত করার বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কিছু মতবিরোধ রয়েছে।”

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা

বিশ্ব সম্প্রদায় বিশেষত কাতার, তুরস্ক, এবং যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় মধ্যস্থতা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা ছাড়া কোনো স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। কাতার এবং তুরস্কের অংশগ্রহণ গাজার মানুষদের মানবিক সহায়তা দ্রুত পৌঁছানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি আলোচনায় যোগ দিয়ে বলবেন যে, “গাজা মানুষের নিরাপত্তা, খাদ্য, পানি ও ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।” তুরস্কের গোয়েন্দা প্রধানের উপস্থিতি আলোচনা কে আরও শক্তিশালী করছে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি কার্যকরভাবে সমাধান করা হবে।

মানবিক সংকট ও আশার আলো

গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং অবরুদ্ধ পরিস্থিতি সাধারণ মানুষকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করছে। খাদ্য, পানি, ওষুধের ঘাটতি এবং অব্যাহত বিমান হামলা ও গোলাবারুদ সশস্ত্র সংঘাত মানুষের জীবনকে কঠিন করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আলোচনার মাধ্যমে শুধু রাজনৈতিক সমাধান নয়, বরং মানবিক পরিস্থিতি উন্নত করারও সুযোগ রয়েছে।

হামাস আশা করছে, এই বৈঠকের মাধ্যমে তারা ইসরাইলের কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি নিশ্চয়তা পাবে এবং গাজার মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বৈঠক সফল হয়, তা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

বিশ্লেষকরা কী বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আলোচনায় দুই পক্ষের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আস্থা প্রতিষ্ঠা করা। ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ, পূর্বের যুদ্ধবিরতির ব্যর্থতা এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক চাপ আলোচনাকে জটিল করেছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনা কিছুটা আশার আলো প্রদান করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি এই আলোচনাকে কার্যকর করার সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে।

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

বিশ্লেষকরা বলছেন, আলোচনার ফলাফল সম্পূর্ণরূপে সফল না হলেও এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন দিক নির্দেশক হতে পারে। যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হলে গাজায় মানবিক সহায়তা দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ভিত্তি তৈরি হবে।

গাজা যুদ্ধ বন্ধ এবং স্থায়ী শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা, স্থানীয় নেতৃত্বের দৃঢ়তা এবং দুই পক্ষের মধ্যে আস্থা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আলোচনার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে যেতে পারে।

MAH – 13226 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button