
জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো)-র ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী সামাজিক মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, বাংলাদেশ জাপানকে ৩০-২৭ ভোটে হারিয়ে এই মর্যাদাপূর্ণ পদ অর্জন করেছে। নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল, তবে শেষ পর্যায়ে তারা নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়।
নির্বাচনের বিস্তারিত
ইউনেসকোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনের সভাপতিত্ব পাওয়া বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে একটি বড় সাফল্য। নির্বাচনে জাপানকে হারিয়ে বাংলাদেশের জয় আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে।
এবারের সাধারণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত উজবেকিস্তানের সামারকান্দ শহরের সিল্ক রোড কনফারেন্স সেন্টারে। সম্মেলনে বিশ্বের ১৯৬টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। সভাপতিত্বের দায়িত্ব প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলবে।
প্রভাব ও গুরুত্ব
ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলন হলো শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মঞ্চ। সম্মেলনের সভাপতিত্ব পাওয়া কোনো দেশের জন্য কেবল মর্যাদা নয়, বরং বৈশ্বিক নীতি প্রণয়ন ও সাংস্কৃতিক সংহতির ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ দেয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশি নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি আরও দৃঢ় করবে। বিশেষ করে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন এবং কৌশলগত নীতিমালা বিশ্বের নজরে আসবে।
বাংলাদেশের পূর্ব অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশ ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেছিল। তখনও দেশের কূটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দক্ষতার প্রশংসা হয়। এবার দ্বিতীয়বারের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মঞ্চে পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিশ্চিত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের নেতৃত্ব দেশের কূটনৈতিক প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে। ভবিষ্যতে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আরও ফলপ্রসূ হবে।
কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেছেন, “এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব এবং নেতৃত্বের স্বীকৃতি দেশের জন্য মর্যাদাপূর্ণ।”
এছাড়াও, কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই পদ বাংলাদেশকে বৈশ্বিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির নীতি নির্ধারণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো বাংলাদেশের কূটনৈতিক দক্ষতা ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশি নেতৃত্বে সম্মেলন আরও ফলপ্রসূ ও সহনশীল পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
পরিশেষে
ইউনেসকোর ৪৩তম সাধারণ সম্মেলনে বাংলাদেশের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া দেশের জন্য কূটনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। বাংলাদেশের নেতৃত্বে এই সম্মেলন দেশের আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও কূটনৈতিক প্রভাবকে শক্তিশালী করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী দিনের শিক্ষা ও সংস্কৃতির নীতি প্রণয়ন, বৈশ্বিক সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এম আর এম – ১৬৭৩,Signalbd.com