রাজনীতি

শেখ হাসিনার ভোটে অংশগ্রহণের সব পথ বন্ধ

Advertisement

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সব সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) মামলার কারণে তিনি সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার কর্মকর্তা বা সরকারি কোনো পদে নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য হিসেবে ঘোষিত হয়েছেন।

আইসিটি সংশোধনের মাধ্যমে নতুন বিধান

সোমবার (৬ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকার আইসিটি আইন এক বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সংশোধন করে নতুন ধারা ২০ সি যুক্ত করেছে। নতুন অধ্যাদেশের শিরোনাম ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (তৃতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’।

নতুন ধারায় বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক মামলা হয়, তবে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া বা নির্বাচিত থাকতেও অযোগ্য হবেন। একইভাবে স্থানীয় সরকার, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র, প্রশাসক বা সরকারি পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ারও অযোগ্যতা ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনের বিস্তারিত

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মুদ্রণ ও প্রকাশনা শাখা মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উপধারা (১)-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত ব্যক্তি খালাস পান বা রায়ে অব্যাহতি পান, তবে ওই ব্যক্তি পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার বা সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্যতা ফিরে পাবেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে আইসিটি মামলার বিচার কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।

এ সময় আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান, কেউ কেউ বিদেশে গোপনে চলে যান। এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন হত্যা মামলা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত।

আইনের প্রভাব

নতুন ধারার মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ যাদের বিরুদ্ধে আইসিটি মামলা রয়েছে, তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো বিচারাধীন অবস্থায় থাকা ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় কোনো দায়িত্বে নিয়োগ বা নির্বাচিত হওয়া প্রতিরোধ করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই আইন সংশোধন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করতে সাহায্য করবে।

বিরোধী প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগের অনুগতরা এই সিদ্ধান্তকে বিতর্কিত বলছেন। তারা অভিযোগ করেছেন যে, এই আইনের সংশোধন একটি নির্বাচনী প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি কোনো ব্যক্তির প্রতি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, বরং আইসিটি আইন কার্যকর করার অংশ।

একজন বিশ্লেষক বলেন, “আইন অনুযায়ী বিচারাধীন অবস্থায় থাকা ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণ বন্ধ করা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি আইনত সঠিক, কিন্তু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।”

বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ মতামত

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধারা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করলে দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি আন্তর্জাতিক অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত, তাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলে এটি ভোটারের আস্থা কমাতে পারে। সেক্ষেত্রে এই সংশোধন গুরুত্বপূর্ণ।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষমতা সীমিত করবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার কারণে শেখ হাসিনার ভোটে অংশগ্রহণের সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আইসিটি সংশোধন আইনের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায় নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক প্রভাব আগামী নির্বাচনের পরিস্থিতি ও প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করছে।

এম আর এম – ১৬৭০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button