
বাংলাদেশের ১৮টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাত ১টার মধ্যে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরের জন্য দেয়া বিশেষ সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
ঝড়ের আশঙ্কায় ১৮ অঞ্চলে সতর্কতা
আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে এই ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, মৌসুমি বায়ুর শেষ প্রান্তের সক্রিয়তা এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাস
বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দেয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে। একইসঙ্গে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মৌসুমি বায়ুর অবস্থান ও প্রভাব
আবহাওয়া দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মৌসুমি বায়ু বর্তমানে বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর এই সক্রিয়তা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দিন দক্ষিণাঞ্চলে আরো বৃষ্টি হতে পারে।
এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা থাকায় উপকূলীয় এলাকায়ও সতর্কতা জারি রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে যাতে আকস্মিক বৃষ্টিপাত বা ঝড়ের কারণে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
নদীবন্দর ও উপকূলীয় এলাকার জন্য নির্দেশনা
নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌযানগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিশেষ করে পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর পুনঃ ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
নৌযান পরিচালকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তারা রাত ১টার মধ্যে যাত্রা এড়িয়ে চলে এবং নদীপথে চলাচলের সময় ঘনবৃষ্টি বা দমকা হাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।
সাধারণ মানুষের করণীয়
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বজ্রপাত ও ঝড়ো হাওয়ার সময় খোলা জায়গায় অবস্থান না করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষক, জেলে ও শ্রমজীবী মানুষদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়টিতে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যায়, তাই গাছের নিচে কিংবা উঁচু জায়গায় অবস্থান না করাই ভালো। ঘরে থাকলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
আবহাওয়াবিদের ব্যাখ্যা
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা থাকায় এ ধরনের বজ্রবৃষ্টি অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। তবে আগামী সপ্তাহে এই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।
তার ভাষায়, “বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে আর্দ্রতা বেড়েছে। এর প্রভাবে রাতের দিকে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত এবং দমকা বাতাস বইতে পারে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এটি মৌসুমি পরিবর্তনের একটি স্বাভাবিক ধাপ।”
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাত ১টার পর থেকে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে পারে। তবে যারা নদীপথে বা খোলা স্থানে অবস্থান করছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ করা হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে এবং পরবর্তী আবহাওয়া বার্তা নিয়মিতভাবে অনুসরণ করতে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব যতদিন থাকবে, ততদিন মাঝে মাঝে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত চলতে পারে। তাই সতর্ক থাকা ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
এম আর এম – ১৬৬৩,Signalbd.com