রাজনীতি

নির্বাচনের মাধ্যমে যারা এক্সিট চান, মৃত্যু ছাড়া তাদের সেফ এক্সিট নেই: সারজিস

Advertisement

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করে নির্বাচনের মাধ্যমে ‘এক্সিট’ নিতে চান, তাদের জন্য মৃত্যু ছাড়া কোনো নিরাপদ পথ নেই। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে নওগাঁ জেলা শাখার সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাকর্মী। সারজিস বলেন, “এত শহীদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত এই রাষ্ট্রের দায়িত্ব থেকে কেউ যদি ভয় পায় বা পালানোর চিন্তা করে, তবে জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক, বাংলাদেশের মানুষ তাদের খুঁজে নেবে।”

দায়িত্ব পালনে অনীহা ও ‘সেফ এক্সিট’ প্রসঙ্গে সারজিস

সারজিস আলম বলেন, কিছু উপদেষ্টা এখন শুধু নির্বাচনের পর দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তারা মনে করেন, ভোটের মাধ্যমে দায়িত্ব শেষ করলেই তারা দায়মুক্ত হবেন। কিন্তু এমন মানসিকতা দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।
তিনি আরও বলেন, “যারা কেবল দায়িত্ব থেকে বাঁচতে নির্বাচনকে ‘সেফ এক্সিট’ হিসেবে দেখছেন, তারা জনগণের কাছে জবাবদিহি থেকে রেহাই পাবেন না। তাদের জন্য মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই।”

নির্বাচন কমিশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ

এনসিপির এই নেতা বলেন, “নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের আচরণে স্বাধীনতা সংকোচনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। যদি কমিশন কারো চাপে কাজ করে, সেটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, কমিশন নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।

শাপলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা

সারজিস জানান, এনসিপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করবে। এই প্রতীকের ব্যবহারে কোনো আইনি বাধা নেই বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতীক আইনি বৈধ। আমরা জনগণের ভোটের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবর্তনের বার্তা দিতে চাই।”

সভায় তিনি আরও যোগ করেন, “রাজনীতিতে সৎ ও সাহসী মানুষদের একত্রিত হতে হবে। নৈতিকতার ভিত্তিতে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।”

জোট রাজনীতি ও সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি

জোট গঠনের সম্ভাবনা নিয়ে সারজিস বলেন, “এনসিপি এখনই কোনো জোটে যাচ্ছে না। তবে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। আপাতত আমাদের লক্ষ্য জেলা থেকে ইউনিট পর্যায় পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করা।”
তিনি জানান, নভেম্বর মাসের মধ্যে দেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিট পর্যায়ে কমিটি গঠন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

রাজনৈতিক ঐক্য ও নতুন শক্তির আহ্বান

সারজিস আলম বলেন, “বাংলাদেশের সৎ, দেশপ্রেমিক ও নৈতিক মানুষরা চাইলে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে পারেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনো রূপান্তর বা ভিন্ন সংস্করণ এখন দেশের জন্য প্রাসঙ্গিক নয়।”
তিনি বলেন, “এনসিপি এমন কোনো অবস্থান নেবে না যা অতীতের ব্যর্থ রাজনীতির পুনরাবৃত্তি ঘটায়। আমরা নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবতার আলোকে একটি জনগণকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই।”

সভায় উপস্থিতি ও দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নওগাঁ জেলা শাখার সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী।
সভায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পর্যালোচনা, সদস্য সংগ্রহ বৃদ্ধি ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সক্রিয়তা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সারজিস জানান, “আমরা চাই রাজনীতি হোক জনগণের কল্যাণে, ব্যক্তিস্বার্থে নয়। নীতিহীন রাজনীতি এখন দেশের সবচেয়ে বড় বিপদ। যারা দায়িত্বে থেকেও জনগণকে ভুলে যাচ্ছেন, তারা ইতিহাসের বিচারে কখনো রক্ষা পাবেন না।”

বিশ্লেষকদের মন্তব্য

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সারজিস আলমের বক্তব্য মূলত বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে একটি কঠোর সতর্কবার্তা। তার বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে, তিনি দলীয় শৃঙ্খলা, নৈতিকতা এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্বের ওপর জোর দিচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপি যদি এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারে, তবে আগামী নির্বাচনে তারা একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

সারজিস আলমের বক্তব্যে স্পষ্ট বার্তা—যারা দায়িত্ব থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য জনগণের বিচারের পথ খোলা। রাজনৈতিক নেতৃত্বের নৈতিকতা ও জবাবদিহির প্রশ্নে তার এই কঠোর অবস্থান নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, এনসিপি তাদের ঘোষণাগুলো কতটা বাস্তবায়ন করতে পারে এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কীভাবে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করে।

এম আর এম – ১৬৫৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button