
দেশের বাজারে সোনার দাম এক নতুন রেকর্ড গড়ল। সাম্প্রতিক সময়ে ধীরে ধীরে মূল্যবৃদ্ধির ধারায় অবশেষে প্রতি ভরি সোনার দাম ২ লাখ ৭২৬ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এটি দেশের ইতিহাসে সোনার সর্বোচ্চ দাম। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সোমবার সন্ধ্যায় এই নতুন দামের ঘোষণা দেয়। নতুন মূল্য মঙ্গলবার থেকে দেশের সব জুয়েলারি দোকানে কার্যকর হয়েছে।
বাজুস জানিয়েছে, ভালো মানের ২২ ক্যারেটের সোনার প্রতি ভরি দামের বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৩ হাজার ১৫০ টাকা। এর আগে, গত রোববারও প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়েছিল ২ হাজার ২২৯ টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়েছে ৫ হাজার ৩৭৯ টাকা।
অন্যান্য ক্যারেটের সোনার নতুন দাম
- ২৪ ক্যারেট সোনা: প্রতি ভরি প্রায় ২ লাখ ৯৫০ টাকা
- ১৮ ক্যারেট সোনা: প্রতি ভরি প্রায় ২ লাখ ১২৫ টাকা
- ১৪ ক্যারেট সোনা: প্রতি ভরি প্রায় ১ লাখ ৬৫৫ টাকা
এছাড়াও বাজারে বিভিন্ন মানের সোনার দামও সমন্বয় করা হয়েছে।
সোনার দাম বৃদ্ধির কারণ
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব সোনার মূল্যে সরাসরি প্রভাব ফেলে। অর্থনীতিতে যখন অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়, তখন বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন। বিশেষ করে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে সোনার চাহিদা বেড়ে যায়, যা দাম বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
বিশ্ববাজারেও সাম্প্রতিক কয়েক দিনের মধ্যে সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স (প্রায় ৩১.১ গ্রাম) সোনার দাম পৌঁছেছে ৩,৯৫২ ডলার, যা ১ অক্টোবরের ৩,৮৭১ ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।
বাংলাদেশের বাজারেও এই বৃদ্ধি প্রভাব ফেলেছে। বাজুস জানিয়েছে, দেশের বাজারে সোনার দামের ওঠাপড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
ইতিহাসে সোনার দাম
স্বাধীনতার সময় প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল মাত্র ১৭০ টাকা।
- ২০০০ সালে দাম: ৬,৯০০ টাকা
- ২০২০ সালে দাম: প্রায় ৭০,০০০ টাকা
- ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো ১ লাখ টাকা অতিক্রম
- ২০২৫ সালে সর্বশেষ: ২ লাখ ৭২৬ টাকা
স্বাধীনতার পর থেকে সোনার দাম প্রায় ১,১৮১ গুণ বেড়েছে। অর্থাৎ, এটি শুধু একটি বাজারমূল্য বৃদ্ধি নয়, বরং দেশের আর্থিক ইতিহাসের এক অসাধারণ ঘটনা।
বিনিয়োগ ও সোনার গুরুত্ব
বাংলাদেশে সোনা শুধুমাত্র অলঙ্কার হিসেবে নয়, বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবেও প্রচলিত। বিশেষ করে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময়, সাধারণ মানুষ সোনায় বিনিয়োগ করে তাদের মূলধন সংরক্ষণের চেষ্টা করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোনার দাম দীর্ঘমেয়াদে বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ:
- আন্তর্জাতিক বাজারে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলতে থাকবে।
- মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈশ্বিক দামের ওঠাপড়া সোনার দর বাড়াতে পারে।
- দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এখনও যথেষ্ট বেশি।
বিশ্ববাজারের সঙ্গে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সোনার বাজার সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দামের ওঠাপড়া দেশের বাজারেও প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক বৃদ্ধির পেছনে মূলত এই বৈশ্বিক বাজারের প্রভাবই কাজ করেছে।
বিশ্ববাজারে যদি সোনার দাম বেড়ে যায়, তবে দেশের বাজারও সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রভাব অনুভব করে। একইভাবে, আন্তর্জাতিক দর কমলে দেশের বাজারেও দাম কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।
সোনার বাজারে ভবিষ্যৎ প্রবণতা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক এই দাম বৃদ্ধির পর কিছুটা স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিতিশীলতা বা বৈশ্বিক অর্থনীতির চাপ থাকলে দাম আবারও বাড়তে পারে।
এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং উৎসবের মৌসুমও সোনার দামের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, বিয়ের মরশুম বা বড় উৎসবের সময় সোনার চাহিদা বাড়ে, যা দাম বাড়ানোর একটি প্রভাব।
সাধারণ মানুষের প্রভাব
সোনার দাম বাড়লে শুধুমাত্র বিনিয়োগকারীরাই প্রভাবিত হন না। সাধারণ মানুষ যারা দৈনন্দিন জীবনযাত্রার জন্য সোনা ক্রয় করে, তাদের খরচও বাড়ে। বিশেষ করে বিবাহ বা পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য সোনা কেনা অনেক পরিবারকে এখন আরও ব্যয়বহুল করে তুলেছে।
বাজুসও সাধারণ মানুষকে সতর্ক করেছেন, বিনিয়োগের আগে সোনার বাজারের ওঠাপড়া খেয়াল রাখতে।
সোনার দাম এখন দেশে নতুন রেকর্ড গড়েছে। প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ২ লাখ ৭২৬ টাকা ছুঁইছুঁই, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা এই বৃদ্ধির মূল কারণ।
সোনার দাম বৃদ্ধির এই ধারা আগামী দিনে কিভাবে চলবে তা সময়ই দেখাবে। তবে বর্তমান সময়ে এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য এবং সাধারণ মানুষের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
MAH – 13207 I Signalbd.com