বাংলাদেশ

প্রবাস জীবনের স্বপ্নভঙ্গ, ‘ফ্রি ভিসার’ টোপে বিপাকে বাংলাদেশিরা

Advertisement

মালদ্বীপে ‘ফ্রি ভিসা’ নামের প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে কয়েকশো বাংলাদেশি প্রবাসী জীবনযুদ্ধে পড়েছেন। বৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া এড়িয়ে দালাল চক্রের মাধ্যমে মালদ্বীপে যাওয়ায় তারা এখন কর্মহীন ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মালদ্বীপের কঠোর শ্রম আইন ও ভিসা শর্ত লঙ্ঘনের কারণে প্রবাসীরা দেশে ফেরার ঝুঁকিতে পড়ছেন।

ফ্রি ভিসা: প্রতারণার নতুন ফাঁদ

বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে প্রেরিত প্রবাসীদের একটি বড় অংশ ‘ফ্রি ভিসা’র প্রলোভনে প্রেরিত হচ্ছে। এই ভিসা বাস্তবে কোনো আইনি ভিত্তি নেই। দালালরা ভিসা এবং কাজের নিশ্চয়তা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

বেশিরভাগ প্রবাসী দেশে গিয়ে দেখতে পান, তাদের ভিসা থাকলেও কাজের নিশ্চয়তা নেই। বাধ্য হয়ে অল্প বেতনে কাজ করতে হচ্ছে বা অনৈতিক অবস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মালদ্বীপ সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, যেসব প্রবাসী অননুমোদিতভাবে কাজ করবেন, তাদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

প্রবাসীদের মানবেতর জীবন

ফ্রি ভিসায় মালদ্বীপে আসা প্রবাসীরা কর্মহীনতার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খাবার, বাসস্থান ও বেতন সংক্রান্ত নিশ্চয়তা নেই। অনেকেই ভিসার শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে দেশের উদ্দেশ্যে ফেরার পথে রয়েছেন। এই পরিস্থিতি শুধু নতুন প্রবাসীদের নয়, যারা ইতিমধ্যেই বৈধভাবে কাজ করছেন তাদের জীবনযাত্রাকেও প্রভাবিত করছে।

স্থানীয় প্রবাসীরা জানিয়েছেন, দালাল চক্রের কারণে বৈধ প্রক্রিয়ায় কাজ করা শ্রমিকরাও নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন।

দীর্ঘ বিরতির পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ভিসা উন্মুক্ত করে। এরপর ২০২৪ সালে অবৈধ নিয়োগের কারণে এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়। ২০২৫ সালের মার্চ থেকে আবারও দক্ষ ও অদক্ষ বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা শিথিল করা হয়।

তবে দালাল চক্র এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রবাসীদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে। তারা মালদ্বীপের আইনি কাঠামোর বাইরে ভিসার সুযোগ দেখিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করছে।

মালদ্বীপ সরকারের পদক্ষেপ

মালদ্বীপ সরকার ইতিমধ্যে কঠোর পদক্ষেপ শুরু করেছে। যেসব প্রবাসী উন্মুক্ত ভিসায় এসে অনুমোদিত নিয়োগকর্তার বাইরে কাজ করেছেন, তাদের বৈধ ভিসার শর্ত লঙ্ঘনের কারণে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বহু প্রবাসী এখনও ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এদের মধ্যে বৈধ ভিসার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কাজ না পেয়ে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে। প্রবাসীরা যাতে আইন লঙ্ঘন না করেন, তা নিশ্চিত করতে মালদ্বীপ সরকার নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের সতর্কতা

বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) মো. সোহেল পারভেজ জানিয়েছেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “কারো মুখের কথা বিশ্বাস না করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যাচাই-বাছাই করে আসবেন। হাইকমিশনের মাধ্যমে ভিসা ও নিয়োগের সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, যারা মালদ্বীপে গিয়ে কাজের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন, তাদের জন্য হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা অপরিহার্য।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

ফ্রি ভিসার কারণে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। দালাল চক্রের প্রলোভনে বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রেরণ হলে দেশের বৈধ জনশক্তি রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তৎপর পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপদ এবং বৈধ নিয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি।

মালদ্বীপে ফ্রি ভিসার ফাঁদে বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিপদগ্রস্ত। দালাল চক্রের প্রতারণা ও বৈধ নিয়োগের অভাব প্রবাসীদের স্বপ্নভঙ্গ করছে। সরকার এবং হাইকমিশনের সক্রিয় পদক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

ভবিষ্যতে, প্রতারণামূলক ফ্রি ভিসার প্রবণতা বন্ধ করা না গেলে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার ও প্রবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা হুমকির মুখে থাকবে।

এম আর এম – ১৬৫৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button