বিশ্ব

অ্যাপল ওয়াচের সাইরেন ফিচারে বাঁচলো ভারতীয় স্কুবা ডাইভারের প্রাণ

Advertisement

প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজতর করেছে, আবার কখনও কখনও তা হয়ে উঠেছে জীবনরক্ষাকারী। ভারতে এমনই এক বাস্তব উদাহরণ তৈরি করেছেন মুম্বাইয়ের তরুণ স্কুবা ডাইভার খিতিজ জোদাপে। তাঁর হাতে থাকা অ্যাপল ওয়াচ আলট্রার “সাইরেন ফিচার” না থাকলে হয়তো এই ডাইভার আজ বেঁচে থাকতেন না। সমুদ্রের গভীরে সরঞ্জামের ত্রুটিতে প্রাণঘাতী পরিস্থিতির মুখে পড়েও তিনি জীবন ফিরে পেয়েছেন এই স্মার্টওয়াচের সতর্কতা ও শব্দ সংকেতের কারণে।

ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ

খিতিজ জোদাপে নামের ২৬ বছর বয়সী এই তরুণ একটি ই-কমার্স কোম্পানিতে কর্মরত। ২০২০ সাল থেকে নিয়মিত স্কুবা ডাইভিং করে আসছেন তিনি। সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে ডাইভিং করার সময় তাঁর সরঞ্জামে আকস্মিক সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় ৩৬ মিটার গভীরে নেমে যাওয়ার পর হঠাৎ তাঁর ওয়েটবেল্ট খুলে যায়, ফলে শরীর দ্রুত উপরের দিকে উঠতে থাকে।

ডাইভিংয়ের নিয়ম অনুযায়ী, এত দ্রুত ওপরে ওঠা শরীরের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক— এতে ফুসফুসে গ্যাস বুদবুদ জমে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর হাতে থাকা অ্যাপল ওয়াচ আলট্রা হঠাৎ সাইরেন বাজাতে শুরু করে এবং স্ক্রিনে সতর্কবার্তা দেখায়, “আপনার ওঠার গতি বিপজ্জনক, দয়া করে ধীর করুন।”

সমুদ্রের তীব্র ঢেউ ও সীমিত দৃশ্যমানতার মধ্যেও সেই সাইরেনের শব্দ শুনে প্রশিক্ষক দ্রুত তাঁকে খুঁজে পান এবং নিরাপদে উপরে তুলতে সক্ষম হন। ফলে একটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়।

ডাইভারের অভিজ্ঞতা: “ঘড়িটিই আমাকে বাঁচিয়েছে”

ঘটনার পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খিতিজ বলেন, “আমরা প্রায় ৩৬ মিটার নিচে ছিলাম। হঠাৎ শরীর উপরে উঠতে শুরু করে, তখন ঘড়ি তীব্র শব্দ করে আমাকে থামতে বলে। আমি বুঝে ওঠার আগেই প্রশিক্ষক এসে আমাকে ধরে ফেলেন। সেই শব্দটাই ছিল আমার বাঁচার একমাত্র সুযোগ।”

তিনি আরও জানান, প্রযুক্তির প্রতি তাঁর আগ্রহ থেকেই তিনি অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহার শুরু করেন, কিন্তু কখনও ভাবেননি এই গ্যাজেট তাঁর প্রাণ রক্ষা করবে।

টিম কুকের প্রতিক্রিয়া

অ্যাপল সিইও টিম কুক নিজেও জোদাপের গল্পে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি এক বার্তায় লেখেন, “আপনার প্রশিক্ষক সাইরেন শুনে দ্রুত সাহায্য করেছেন জেনে আমি আনন্দিত। আমাদের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। সুস্থ থাকবেন।”

এই প্রতিক্রিয়া সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকেই প্রযুক্তি কিভাবে বাস্তব জীবনে জীবন রক্ষা করতে পারে, তার প্রশংসা করেন।

অ্যাপল ওয়াচের সাইরেন ফিচার কীভাবে কাজ করে

অ্যাপল ওয়াচ আলট্রার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর সাইরেন ফিচার। এটি মূলত জরুরি অবস্থায় ব্যবহারকারীর চারপাশের মানুষকে সতর্ক করতে ডিজাইন করা।

এই সাইরেন সর্বোচ্চ ১৮০ মিটার দূর থেকেও শোনা যায়। শব্দটি দুটি আলাদা ফ্রিকোয়েন্সির উচ্চমাত্রার টোনে বাজে, যা প্রাকৃতিক পরিবেশে সাধারণত পাওয়া যায় না—ফলে মানুষের দৃষ্টি দ্রুত আকর্ষণ করে।

সাধারণত পাহাড়ে পথ হারানো, দুর্ঘটনায় পড়া বা জলে আটকে গেলে এই ফিচারটি সক্রিয় করা হয়। কিন্তু জোদাপের ক্ষেত্রে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে, যা ডিভাইসটির উন্নত সেন্সর প্রযুক্তির প্রমাণ দেয়।

প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা: এক নতুন দৃষ্টান্ত

বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাপল ওয়াচ আলট্রার এই ফিচার শুধু ফিটনেস নয়, বরং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষ করে ডাইভার, পর্বতারোহী, ট্রেকার ও দূরবর্তী এলাকায় কাজ করা মানুষদের জন্য এই প্রযুক্তি হতে পারে জীবনরক্ষাকারী সহায়ক।

ভারতের ডাইভিং প্রশিক্ষক সমিতির সদস্য অনুজ দেশমুখ বলেন, “সমুদ্রের নিচে কোনও ত্রুটি ঘটলে সময়ই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। কয়েক সেকেন্ড দেরি মানে মৃত্যুঝুঁকি। জোদাপের ক্ষেত্রে ঘড়িটি দ্রুত সিগন্যাল দিয়েছে, তাই সে বেঁচে গেছে। এটি নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির এক বাস্তব আশীর্বাদ।”

এর আগে এমন উদাহরণ

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায়ও অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহার করে মানুষের জীবন বাঁচার একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে। কেউ হার্ট অ্যাটাকের সময় সতর্কতা পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছেছেন, আবার কেউ দুর্ঘটনায় পড়ে “ইমার্জেন্সি SOS” ফিচারের মাধ্যমে সাহায্য চেয়েছেন।

তবে স্কুবা ডাইভিংয়ের মতো গভীর পানিতে এই প্রযুক্তি কার্যকরভাবে কাজ করেছে—এমন ঘটনা প্রথমবারই সামনে এল।

অ্যাপল ওয়াচ আলট্রা কেন জনপ্রিয়

অ্যাপল ওয়াচ আলট্রা মডেলটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ও পেশাদার ব্যবহারকারীদের জন্য। এর বডি টাইটেনিয়াম নির্মিত, ব্যাটারি স্থায়িত্ব বেশি এবং এটি ১০০ মিটার পর্যন্ত পানির নিচে টিকে থাকতে সক্ষম।

এর মধ্যে GPS ট্র্যাকিং, ব্লাড অক্সিজেন মনিটর, গভীরতা সেন্সর ও সাইরেনসহ একাধিক নিরাপত্তা ফিচার রয়েছে। তাই এটি শুধু একটি স্মার্টওয়াচ নয়, বরং একটি “পার্সোনাল সেফটি ডিভাইস” হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছে।

প্রযুক্তি নির্ভর ভবিষ্যৎ

এই ঘটনার পর অনেকে বলছেন, প্রযুক্তি শুধু বিলাসিতা নয়, এটি এখন জীবন বাঁচানোর হাতিয়ারও হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, প্রযুক্তির পাশাপাশি মানুষের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা সমান গুরুত্বপূর্ণ।

মুম্বাইয়ের ডাইভিং কোচরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যেসব ডাইভার নিয়মিত গভীর সমুদ্রে যান, তাঁদের উচিত প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা গ্যাজেট ব্যবহার করা এবং নিয়মিত সেগুলোর ফিচার আপডেট রাখা।

অ্যাপল ওয়াচের সাইরেন ফিচার যে শুধু একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, বরং বাস্তব জীবনের রক্ষাকবচ—তার প্রমাণ মুম্বাইয়ের এই ঘটনা। খিতিজ জোদাপে আজ বেঁচে আছেন প্রযুক্তির কারণে।
এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, সঠিক ব্যবহারে প্রযুক্তি হতে পারে আমাদের সবচেয়ে বড় সঙ্গী।

এম আর এম – ১৬৪২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button