
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর সঠিক সময়ে নিবন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা যখন ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত থাকে, তখন তাদের শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রেজিস্ট্রেশন একটি অপরিহার্য ধাপ। এ বছরও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে যারা এখনো রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারেনি বা বাদ পড়েছে, তাদের জন্য নতুন সুযোগ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা।
বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর ২০২৫ থেকে ১২ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ থাকবে। নির্ধারিত সময়সীমার বাইরে কোনোভাবেই বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. মো. মাসুদ রানা খান স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বোর্ডের আওতাধীন অনুমোদিত ও স্বীকৃত সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও স্কুল অ্যান্ড কলেজকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষ করতে হবে। অন্যথায় এর দায়ভার সরাসরি প্রতিষ্ঠান প্রধানকে বহন করতে হবে।
অর্থাৎ, কোনো বিদ্যালয় যদি সময়মতো রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়, তবে এর দায় ছাত্রছাত্রী নয়, বরং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নিতে হবে। ফলে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
টিসি নিয়ে আসা শিক্ষার্থীরাও রেজিস্ট্রেশনের আওতায়
যেসব শিক্ষার্থী অন্য শিক্ষা বোর্ড থেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) নিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে, তারাও এই সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। ফলে দেশের এক শিক্ষা বোর্ড থেকে অন্য বোর্ডে স্থানান্তরিত শিক্ষার্থীদের জন্যও এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ।
কেন রেজিস্ট্রেশন এত গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। এর কিছু প্রধান কারণ হলো—
- পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা
৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন না করলে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা জেএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। - জাতীয় ডেটাবেসে নাম অন্তর্ভুক্তি
রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর নাম, জন্মতারিখ, অভিভাবকের নামসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জাতীয় ডেটাবেসে যুক্ত হয়। ভবিষ্যতে একাডেমিক সার্টিফিকেট, মার্কশিট ও পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য এগুলো অপরিহার্য। - অসামঞ্জস্য এড়ানো
শিক্ষাজীবনের যেকোনো পর্যায়ে নাম, বয়স বা অন্যান্য তথ্যের অসামঞ্জস্য দেখা দিলে রেজিস্ট্রেশন ডেটা সঠিক প্রমাণ হিসেবে কাজ করে।
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া কেমন হবে?
শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ হবে অনলাইনে। বিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান প্রধান এ কাজে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবেন। সাধারণত নিম্নলিখিত ধাপ অনুসরণ করতে হয়—
- বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে।
- শিক্ষার্থীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য (নাম, জন্মতারিখ, অভিভাবকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর) সঠিকভাবে এন্ট্রি করতে হবে।
- ছবি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করতে হবে।
- নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।
- সফলভাবে তথ্য জমা দেওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত হবে।
কোন কোন শিক্ষার্থী বাদ পড়ে যায়?
প্রতিবারই দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী সময়মতো রেজিস্ট্রেশন করতে পারে না। এর পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে—
- অভিভাবকের সচেতনতার অভাব
- বিদ্যালয়ের অবহেলা বা দেরি
- টিসি নিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন না করা
- অনলাইন প্রক্রিয়ায় ভুল তথ্য প্রদান
- আর্থিক সমস্যা বা ফি জমা দিতে দেরি
এই কারণেই শিক্ষা বোর্ড বারবার জোর দিয়ে বলে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রতি বিশেষ সতর্কবার্তা
এবারের বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রেজিস্ট্রেশনের পুরো দায়ভার প্রতিষ্ঠান প্রধানের ওপর। অর্থাৎ, শিক্ষার্থী বা অভিভাবক নয়, বরং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো প্রতিটি শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করা।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশনকে গুরুত্ব না দিয়ে দেরি করে। শেষ মুহূর্তে রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে অনেক সময় তথ্যগত ভুল হয়। এতে পরবর্তীতে শিক্ষার্থী ভোগান্তিতে পড়ে। তাই প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই কাজ শেষ করতে।
বাদপড়া শিক্ষার্থীদের সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না
২০২৩ শিক্ষাবর্ষে যারা ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল কিন্তু এখনো রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি, তাদের জন্য এটি শেষ সুযোগ। তাই শিক্ষার্থীদের পরিবারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, বিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নিতে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে নিয়মিত ও সময়মতো রেজিস্ট্রেশন অত্যন্ত জরুরি। এতে শিক্ষার্থীরা শুধু জাতীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগই পায় না, বরং ভবিষ্যতের একাডেমিক ক্যারিয়ারও সুরক্ষিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক অধ্যাপক জানান, “শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবেই বাদ না পড়ে, সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবক উভয়ের দায়িত্বশীল হতে হবে। কারণ একবার সুযোগ হারালে পরবর্তীতে অনেক ঝামেলা তৈরি হয়।”
MAH – 13192 I Signalbd.com