
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কোরআন অবমাননার ঘটনা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী কোরআন তিলাওয়াত, কোরআন স্টাডি সার্কেল এবং কোরআনের অনুবাদ ও তাফসির বিতরণের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
রোববার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিবাদ কেবল ঘৃণায় নয়, বরং দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রতিটি পদক্ষেপের জবাবে আমরা ইসলামের সুমহান আদর্শ সর্বত্র ছড়িয়ে দেব ইনশাআল্লাহ।”
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন অবমাননার পরিপ্রেক্ষিত
সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীর পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দেশজুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ এই ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনার প্রভাব শিক্ষাঙ্গনে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা এবং শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
আজহারী বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এটি দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের মাঝে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। এর আগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদিস উদাহরণ দেওয়ার কারণে শিক্ষকের বহিষ্কার দেখা গেছে। এ ধরনের ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়, বরং কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষের উদাহরণ।”
ধর্মীয় সংবেদনশীলতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
মিজানুর রহমান আজহারী আরও উল্লেখ করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় অনুভূতি এবং সংবেদনশীলতা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহনশীলতা, ধর্মীয় শ্রদ্ধা এবং নৈতিকতার শিক্ষা দিতে পারে। তিনি বলেন, “কোনো শিক্ষার্থী বা ব্যক্তি যদি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়, তার জন্য মানসিক হাসপাতাল বা রিহ্যাব সেন্টার একটি নিরাপদ বিকল্প হতে পারে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে কোনো ঘটনা ঘটিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা কখনোই মেনে নেওয়া যাবে না।”
প্রতিবাদ ও সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান
আজহারী দেশের সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অমুসলিম শিক্ষার্থীদেরও উচিত এর কঠোর প্রতিবাদ করা। কোনো ধর্মগ্রন্থের অবমাননা আমরা কখনোই বরদাশত করব না। আমাদের প্রতিবাদ কেবল উগ্রতা বা ঘৃণার ভিত্তিতে নয়, বরং শিক্ষামূলক এবং দায়িত্বশীলভাবে হওয়া উচিত।”
তিনি আরও সুপারিশ করেন, পবিত্র কোরআনের শিক্ষার প্রসার ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোরআন তিলাওয়াত কর্মসূচি, কোরআন স্টাডি সার্কেল এবং কোরআনের অনুবাদ ও তাফসির বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। এতে শিক্ষার্থীরা কোরআনের প্রতি সম্মান এবং ইসলামের নৈতিক শিক্ষার প্রতি আরও গভীর দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে পারবে।
শাস্তির দাবি ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা
মিজানুর রহমান আজহারী কোরআন অবমাননাকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “কোরআন অবমাননাকারীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন কাজ করার স্পর্ধা দেখাতে না পারে। দেশের শিক্ষাঙ্গনে এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটে তা নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের বক্তব্য গ্রহণ করছে। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানোতে শিক্ষার্থীরা সচেতনতার পাশাপাশি নৈতিক দায়িত্বও অনুভব করছে।
দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রতিক্রিয়া
দেশজুড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ এই ঘটনা নিন্দা জানিয়েছেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্বের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে নাগরিকরা মন্তব্য করেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় সংবেদনশীলতা এবং নৈতিক শিক্ষার অভাব এ ধরনের ঘটনা ঘটার কারণ।
অনেকে মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কোরআন এবং ইসলামী শিক্ষার উপর নিয়মিত কর্মসূচি এবং শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। এতে ধর্মীয় সহনশীলতা এবং নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৃদ্ধি পাবে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঘটনার তদন্তে জোর দিয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিশ্চিত করতে তারা কোরআন শিক্ষার কার্যক্রম এবং নৈতিক শিক্ষার উপর বিশেষ মনোযোগ দেবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন।
শিক্ষার মধ্য দিয়ে সচেতনতা
মিজানুর রহমান আজহারীর বক্তব্য দেশের সকল নাগরিক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শিক্ষণীয় বার্তা। ধর্মীয় সংবেদনশীলতা এবং নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে হলে শুধু প্রতিবাদ যথেষ্ট নয়, বরং শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কোরআন তিলাওয়াত, কোরআন স্টাডি সার্কেল এবং কোরআনের অনুবাদ ও তাফসির বিতরণ কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ইতিবাচক উদাহরণ হতে পারে।
আজহারী শেষ পর্যন্ত বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ইসলামকে ন্যায়, শিক্ষা ও সহনশীলতার ভিত্তিতে ছড়িয়ে দেওয়া। কোনো ধর্মগ্রন্থের অবমাননা আমরা কখনোই মেনে নেব না, এবং এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে।”
MAH – 13189 I Signalbd.com