রাজনীতি

প্রত্যাশিত নির্বাচনে জনগণের পাশে থাকবো — তারেক রহমান

Advertisement

দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে সরাসরি গণমাধ্যম এড়িয়ে চললেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবশেষে কথা বললেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার সঙ্গে। এই সাক্ষাৎকারকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। আলোচিত এ সাক্ষাৎকারে তিনি সমসাময়িক রাজনীতি, আসন্ন নির্বাচন, দেশে ফেরা এবং জনগণের প্রতি তাঁর অবস্থানসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন।

তারেক রহমান ইঙ্গিত দিয়েছেন— প্রত্যাশিত জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি দেশের মাটিতে থাকবেন এবং জনগণের পাশে দাঁড়াবেন। তাঁর এই ঘোষণা শুধু বিএনপি নয়, পুরো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকেই নড়েচড়ে বসিয়েছে।

দীর্ঘ নীরবতার পর তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন

২০০৭ সালের পর থেকে কার্যত যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। বিভিন্ন কারণে তিনি দীর্ঘ সময় সরাসরি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি। অনেকের ধারণা ছিল, হয়তো তিনি নীরবতা অবলম্বন করে রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন। কিন্তু সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট জানালেন—

“গণমাধ্যমে আমি কথা বলিনি তা নয়, বরং আমার কথা জনগণের কাছে পৌঁছানোর পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আদালতের রায়ে আমার বক্তব্য প্রকাশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল। তবুও আমি থেমে থাকিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি।”

দেশে ফেরার সময় কি ঘনিয়ে এসেছে?

উপস্থাপক সরাসরি প্রশ্ন করেন— আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও কেন তিনি দেশে ফেরেননি? উত্তরে তারেক রহমান বলেন:

“কিছু যৌক্তিক কারণে হয়তো এখনো দেশে ফেরা হয়নি। তবে আমি মনে করি, সময় ঘনিয়ে এসেছে। ইনশাআল্লাহ দ্রুতই দেশে ফিরবো।”

তিনি নির্বাচনের সময় দেশে উপস্থিত থাকার প্রবল ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বলেন:

“যেখানে জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেখানে আমি কীভাবে দূরে থাকবো? একজন রাজনীতিক হিসেবে জনগণের পাশে থাকা আমার দায়িত্ব।”

নির্বাচনে জনগণের পাশে থাকার অঙ্গীকার

তারেক রহমান স্পষ্ট করে জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও গণতন্ত্রকামী জনগণের সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত থাকবেন।

তিনি বলেন,

“নির্বাচন মানেই রাজনৈতিক দল ও জনগণের অংশগ্রহণ। তাই আমি অবশ্যই চাইবো নির্বাচনের সময় জনগণের পাশে থাকতে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বক্তব্য আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির কৌশলগত অবস্থানকে আরও দৃঢ় করবে।

জুলাই অভ্যুত্থান ও তারেক রহমানের ভূমিকা

গত বছরের জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন মোড় এনে দেয়। অনেকের মতে, এই আন্দোলনের পেছনে তারেক রহমানই মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। কিন্তু তিনি এ দাবিকে সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বলেন:

“এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড কোনো ব্যক্তি বা দল নয়। বাংলাদেশের জনগণই এ আন্দোলনের প্রকৃত রূপকার। ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, গৃহিণী, শিক্ষক, সাংবাদিক— সবাই রাস্তায় নেমেছিলেন। এটি ছিল জনগণের আন্দোলন, গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলন।”

গণতন্ত্রের আন্দোলন: দলমতের ঊর্ধ্বে জনঅংশগ্রহণ

তারেক রহমানের মতে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কেবল বিএনপি নয়, বরং দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তিই অংশগ্রহণ করেছিল।

তিনি বলেন,

“এখানে কারও অবদানকে ছোট করে দেখা ঠিক হবে না। বিএনপি, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষ— সবাই মিলে আন্দোলনকে সফল করেছে। এটি আসলে দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে গণতন্ত্রের জন্য মানুষের সম্মিলিত লড়াই।”

ছাত্র নেতৃত্ব ও প্রযুক্তি নির্ভর যোগাযোগ

সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, আন্দোলন চলাকালে দেশের ভেতরের ছাত্র নেতৃত্বের সঙ্গে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। যদিও সরকার ইন্টারনেট ও যোগাযোগব্যবস্থায় নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল।

“অনলাইন আর টেলিফোন প্রায় অচল করে রাখা হয়েছিল। তবুও আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যোগাযোগ রেখেছি। সবাই একে অপরকে সহযোগিতা করেছে।”

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়— দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তিনি কি নিরাপত্তা শঙ্কায় আছেন? উত্তরে তারেক রহমান বলেন:

“বিভিন্ন ধরনের শঙ্কার কথা আমরা শুনেছি, গণমাধ্যমেও এসেছে। তবে এসবকে কেন্দ্র করে আমি জনগণের দায়বদ্ধতা থেকে পিছু হটবো না।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তাঁর এই বক্তব্য বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দেবে।

বিএনপির ভেতরে তারেক রহমানের নেতৃত্ব

দীর্ঘ অনুপস্থিতির পরও বিএনপির নেতৃত্বের কেন্দ্রে আছেন তারেক রহমান। দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোতে তাঁর পরামর্শই চূড়ান্ত হয়ে ওঠে। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা বিশ্বাস করেন, তাঁর প্রত্যাবর্তন আসন্ন নির্বাচনে দলের জন্য বড় প্রেরণা হবে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আসন্ন নির্বাচন

বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা বিএনপির জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি

বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলও নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ ইতোমধ্যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রভাব ফেলবে।

তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রায় দুই দশক ধরে নির্বাসিত এই নেতার দেশে ফেরার অঙ্গীকার এবং জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি বিএনপি-সমর্থকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক মহল এখন তাকিয়ে আছে— সত্যিই কি তিনি নির্বাচনের আগে দেশে ফিরবেন? এবং তাঁর উপস্থিতি কি আগামী নির্বাচনের ফলাফলকে বদলে দেবে?

MAH – 13179 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button