
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রবিবার রাত ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ‘জাতীয় সবুজ মিশন’ চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। মিশনের মূল লক্ষ্য ২৫ কোটি গাছ রোপণ, নদী পুনরুদ্ধার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কৃষি আধুনিকীকরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ এবং যুবসমাজের জন্য সমুদ্র অর্থনীতি সম্প্রসারণ করা। এছাড়া, তিনি দেশের ঢাকা কেন্দ্রিক প্রবৃদ্ধি বন্ধ করে সমগ্র অঞ্চলে সমান উন্নয়ন এবং পরিকল্পিত শহর গড়ার কথা জানান।
বিস্তারিত
তারেক রহমানের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, দেশের গ্রামাঞ্চল, শহর, নদী, বন—এগুলো একসাথে দেশের ভবিষ্যত গঠন করে। একটি ভাঙা পরিবেশে একটি শক্তিশালী বাড়ি থাকতে পারে না। তাই একটি টেকসই এবং সবুজ বাংলাদেশ গড়ার জন্য জাতীয় সবুজ মিশন অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরও বলেন, “একটি বাড়ি একটি মৌলিক মানবাধিকার। আমাদের সকলেরই এমন একটি বাড়ি থাকা উচিত যা নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং সুরক্ষিত। পরিবেশ ও বাসস্থান রক্ষা করা দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য অপরিহার্য।”
মিশনের আওতায় নির্ধারিত ৩১-দফা পরিকল্পনার মধ্যে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে:
১. জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা (দফা ২৯)
২. পরিকল্পিত, সুষম নগরায়ন এবং বিকেন্দ্রীকরণ (দফা ৩১)
তিনি দেশবাসীকে আহ্বান জানান, সবাই একসাথে কাজ করলে একটি সবুজ এবং টেকসই বাংলাদেশ তৈরি করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে পরিবেশ ও জলবায়ু সমস্যা ক্রমবর্ধমান। বন্যা, নদী ভাঙন, শহরাঞ্চলে হঠাৎ জলাবদ্ধতা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই দেশের জন্য একটি জাতীয় পর্যায়ের পরিবেশ ও বৃক্ষায়ন কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন।
আগের সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ থাকলেও তা পর্যাপ্ত ছিল না। শহরাঞ্চলে পরিকল্পিত নগরায়ন না হওয়া এবং গ্রামাঞ্চলে বনভূমি ধ্বংসের ফলে পরিবেশ ও বাসস্থান ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এই মিশনকে সেই ব্যবধান পূরণের একটি সুযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
‘জাতীয় সবুজ মিশন’ চালু হলে দেশের পরিবেশ ও অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব পড়বে।
- বনাঞ্চল বৃদ্ধি এবং নদী পুনরুদ্ধার প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখবে।
- আধুনিক কৃষিকাজ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে কৃষকদের উপার্জন বৃদ্ধি পাবে।
- শহরগুলোতে পরিকল্পিত নগরায়ন জনজীবন সহজ করবে এবং পরিবেশ দূষণ কমাবে।
- যুবসমাজের জন্য সমুদ্র অর্থনীতি সম্প্রসারণে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
রাজনীতিক ও নাগরিক সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। তবে কিছু সমালোচক মনে করেন, কার্যকর বাস্তবায়ন না হলে পরিকল্পনা মাত্র কাগজে থাকবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. সুমন চৌধুরী বলেন, “২৫ কোটি গাছ রোপণ এবং নদী পুনরুদ্ধার কার্যক্রম দেশের পরিবেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনবে। তবে তার সঙ্গে মনিটরিং ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।”
শহর পরিকল্পনাবিদ আতিকুল ইসলাম মন্তব্য করেন, “ঢাকা কেন্দ্রিক বৃদ্ধি কমিয়ে বিকেন্দ্রীকরণ এবং পরিকল্পিত নগরায়ন করা দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে সহায়ক হবে। স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের সমন্বয় প্রয়োজন।”
বাস্তবায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তারেক রহমান জানান, জাতীয় সবুজ মিশন ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রথমে গাছ রোপণ, নদী ও বন পুনরুদ্ধার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হবে। পরে কৃষি আধুনিকীকরণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ এবং সমুদ্র অর্থনীতি সম্প্রসারণের দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, সরকারের পাশাপাশি এনজিও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনগণকেও এই মিশনে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হবে।
জাতীয় সবুজ মিশন দেশের পরিবেশ রক্ষা, পরিকল্পিত নগরায়ন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে কার্যকর বাস্তবায়ন এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকলে লক্ষ্য পূরণ কঠিন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই উদ্যোগের সফলতা মূলত স্থানীয় সরকারের দক্ষতা এবং নাগরিক সচেতনতার উপর নির্ভর করবে।
এম আর এম – ১৬৩৮,Signalbd.com