অর্থনীতি

সেপ্টেম্বরে বেড়েছে প্রবাসী আয়, এসেছে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা

Advertisement

সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক আয় বৃদ্ধির এই ধারায় দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই প্রবাসী আয় দেশে প্রবাহিত হয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসের প্রবাসী আয়

সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২.৬৮ বিলিয়ন (২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ) মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩২ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা, ডলারের বিনিময় হার ১২২ টাকা ধরে নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৬ কোটি ৬৮ লাখ ১০ হাজার ডলার, কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ২৫ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার ডলার, বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৫ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে ৬২ লাখ ৪০ হাজার ডলার প্রবাসী আয় এসেছে।

মাসভিত্তিক তুলনা

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলার (প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা), আগস্টে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা ২৯ হাজার ৫৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এটি প্রমাণ করে, প্রবাসী আয় সেপ্টেম্বরে সামান্য বেড়েছে।

গত অর্থবছরের তুলনায় (২০২৪ – ২৫ অর্থবছর) এই প্রবৃদ্ধি স্পষ্ট। গত বছর ২০২৩–২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় ছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।

রেমিট্যান্স প্রেরণের মূল উৎস

প্রবাসী আয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ অংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপ থেকে। বিশেষ করে সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

প্রবেশকৃত রেমিট্যান্স প্রধানত পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জীবিকা নির্বাহ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিভিন্ন বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করা হয়। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির চাহিদা ও রূপান্তরে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

প্রভাব ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করে এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমায়। এছাড়া এই অর্থ প্রবাসী পরিবার ও স্থানীয় বাজারে সরাসরি ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ধারায় স্থানীয় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিনিয়োগ ও ঋণ প্রক্রিয়া সহজ হয়। এটি ছোট ব্যবসা, কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ আরিফিন বলেন, “প্রবাসী আয় দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক অর্থনৈতিক উৎস। সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি দেখায় প্রবাসী সম্প্রদায়ের অব্যাহত অবদান রয়েছে। এই প্রবাহ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

অন্যদিকে, আর্থিক বিশেষজ্ঞ রানা হোসেন মন্তব্য করেন, “প্রবাসী আয় বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য আশাপ্রদ হলেও, এটি যদি সঠিকভাবে বিনিয়োগে না যায়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে। সরকার ও ব্যাংকগুলোর উচিত এই অর্থ সঠিক ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার নিশ্চিত করা।”

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী, আগামী মাসগুলোতেও প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন, প্রবাসী আয় বাড়ার ফলে দেশীয় বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।

এম আর এম – ১৬৩৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button