
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় একটি পুলিশ চেকপোস্টে ট্রাক শ্রমিকদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা পরিষদ গেইটের সামনে পুলিশের নিয়মিত তল্লাশি চলাকালে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দায়িত্বে থাকা পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনার পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
চেকপোস্টে কী ঘটেছিল
পুলিশ জানায়, অবৈধ বালু ও পাথর পরিবহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত চেকপোস্ট বসানো হয় উপজেলা পরিষদ গেইট এলাকায়। সেদিন দুপুরে এএসআই আব্দুল হামিদের নেতৃত্বে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকালে দুটি ট্রাক আটক করা হয়। একটি ট্রাকে বালু ও অন্যটিতে পাথর বোঝাই ছিল। বৈধ কাগজপত্র চাইলে চালকদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয়।
কিছু সময় পর প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক একটি বাসযোগে এসে হঠাৎ করে পুলিশের উপর হামলা চালায় এবং আটককৃত ট্রাকগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হন। তাদের মধ্যে আছেন এএসআই আব্দুল হামিদ, কনস্টেবল আজিজুর রহমান, দীপংকর হাজং, শহীদ আহমেদ ও মাসেক মিয়া।
আহত পুলিশ সদস্যদের দ্রুত কোম্পানীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা তুলনামূলক গুরুতর হলেও আপাতত সবাই শঙ্কামুক্ত।
পুলিশের বক্তব্য
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রতন শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, “আটককৃত ট্রাকের চালক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের খবর দিলে কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্রমিকরা এসে পুলিশের উপর হামলা চালায় এবং জোরপূর্বক গাড়ি নিয়ে যায়। এই ঘটনায় আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পৃক্ততা
পুলিশ অভিযোগ অনুযায়ী, উপজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আহমদের নেতৃত্বেই হামলা সংগঠিত হয়। তবে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের মতে, অবৈধ বালু ও পাথর পরিবহনকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এলাকার পরিস্থিতি ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা জানায়, হঠাৎ করে শ্রমিকদের একটি দল পুলিশের উপর চড়াও হওয়ায় সবাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকেই দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।
পাথর ও বালু পরিবহনে দীর্ঘদিনের সংকট
কোম্পানীগঞ্জ দীর্ঘদিন ধরেই বালু ও পাথর খননের জন্য পরিচিত এলাকা। এখানে বৈধ-অবৈধ উভয় ধরনের পাথর ও বালু উত্তোলন চলে আসছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি বিধিনিষেধ থাকলেও অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর কারণে অবৈধ পরিবহন বন্ধ করা যায় না। এর ফলে নিয়মিতই শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
স্থানীয়দের উদ্বেগ
এলাকার সাধারণ মানুষ বলছে, প্রতিদিন চেকপোস্ট এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। তবে শ্রমিকরা প্রকাশ্যে পুলিশের উপর হামলা চালাতে পারে — এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বলছে, এই ধরনের ঘটনা যদি বারবার ঘটে, তাহলে আইনশৃঙ্খলার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।
প্রশাসনের করণীয়
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধু হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। অবৈধ বালু ও পাথর পরিবহন বন্ধ করতে প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। একইসঙ্গে শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে।
কোম্পানীগঞ্জে পুলিশের উপর শ্রমিকদের এই হামলা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বালু-পাথর ব্যবসার অনিয়মের বহিঃপ্রকাশ। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কীভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এম আর এম – ১৬৩০,Signalbd.com