শিক্ষা

অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষক নিয়োগও হবে এনটিআরসিএর মাধ্যমে

Advertisement

এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগও হবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে। দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা এ প্রস্তাবকে এবার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ঘোষণা ও বিস্তারিত তথ্য

বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আববার (সি আর আবরার) এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য এনটিআরসিএর মাধ্যমে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।”

বর্তমানে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ এনটিআরসিএর পরীক্ষার মাধ্যমে হয়ে থাকে। তবে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী পদে এতদিন নিয়োগ দিত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ। এসব নিয়োগে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই ছিল।

বাংলাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকার মাসিক বেতন ভাতা প্রদান করে। শিক্ষকরা সরকার থেকে মূল বেতন ও ভাতা পান। কিন্তু এতদিন অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ছিল পরিচালনা পর্ষদের হাতে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি কর্মচারী নিয়োগেও নতুন নিয়ম চালু করেছে। নতুন প্রক্রিয়ায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি কমিটি নিয়োগ কার্য সম্পাদন করবে। এ কমিটিতে আর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের স্থান থাকবে না। এবার একই নিয়মে অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগও এনটিআরসিএর আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

শিক্ষা উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। তিনি মনে করেন, এটি শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় শৃঙ্খলা আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, এতদিন প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির কারণে অনেক যোগ্য প্রার্থী বঞ্চিত হতেন। এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম হলে এই অবস্থা বদলাবে। তবে তারা সতর্ক করে বলেন, এনটিআরসিএর কার্যক্রম আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে।

পরিসংখ্যান ও তুলনা

বর্তমানে দেশে প্রায় ৩০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকের পদে নিয়োগে এনটিআরসিএর ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত হলেও শীর্ষ পদগুলোতে এখনও স্বাধীনভাবে নিয়োগ দেওয়া হতো। একাধিক জরিপে দেখা গেছে, প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ সবচেয়ে বেশি।

ভারত ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশে শিক্ষক নিয়োগে স্বাধীন বোর্ড কাজ করে, যেখানে মেধা ও যোগ্যতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এ প্রক্রিয়া প্রবর্তনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের নিয়োগ ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

বিশেষজ্ঞ মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক অধ্যাপক বলেন, “এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে। তবে কমিশনকে আরও দক্ষ ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। নাহলে প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতায় ভুগবে।”

অন্যদিকে কিছু পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা মনে করছেন, তাদের সম্পূর্ণভাবে প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া এনটিআরসিএর হাতে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নেতৃত্ব নির্বাচনে যোগ্যতার ভিত্তি আরও মজবুত হবে। এতে একদিকে যেমন শিক্ষার মান উন্নত হবে, অন্যদিকে দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্ব কমবে। এখন দেখার বিষয়, নতুন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পর শিক্ষাক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন আসে এবং তা কতটা কার্যকর প্রমাণিত হয়।

এম আর এম – ১৬২৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button