
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংবিধান–সংক্রান্ত প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। বিশেষভাবে, জুলাই জাতীয় সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নির্ধারণই আজকের আলোচনার মূল বিষয়।
রোববার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বেলা পৌনে ১২টায় এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুরু হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা হয়, আলোচনা প্রধানত দলের মতপার্থক্য কতটা কমেছে তা বোঝার জন্য। পাশাপাশি, রাজনৈতিক দল চাইলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও প্রস্তাব আকারে উপস্থাপন করতে পারবে।
সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর অবস্থান
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দলগুলোর স্বাক্ষরসহ সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রদান করা। জুলাই সনদে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও খসড়া প্রায় চূড়ান্ত, বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনও ঐকমত্য হয়নি।
সূত্র জানায়, সনদের কিছু প্রস্তাব নির্বাহী আদেশ বা অধ্যাদেশ জারি করে কার্যকর করা সম্ভব। তবে সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে, মৌলিক সংস্কার এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে গণভোটের মাধ্যমে প্রস্তাব অনুমোদনের প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আলোচনা অনুযায়ী, কমিশন বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার মৌলিক সংস্কার নিয়ে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদনের প্রস্তাব থাকবে। তবে বিএনপি এবং কিছু অন্য দল এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক ও কমিশনের পদক্ষেপ
ঐকমত্য কমিশন ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দুই দিন ধরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার এবং অন্যান্য কমিশন সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আজকের বৈঠকে যদি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না যায়, তবে আলোচনা আগামী দিনে আবারও অনুষ্ঠিত হতে পারে। এর ফলে সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া আরও নিখুঁত ও গ্রহণযোগ্য হবে।
রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ও আলোচনার গুরুত্ব
রাজনৈতিক দলগুলোও এই আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হওয়া জরুরি। দলগুলোর চাওয়ামতে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করে সনদ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। এছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হবে।
সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত লক্ষ্য
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য, জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত সব সংস্কার প্রস্তাব কার্যকর করা। এর মাধ্যমে দেশের সংবিধান আরও দৃঢ় হবে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, কমিশনের এই উদ্যোগ দেশের গণতন্ত্রের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো একে গ্রহণ করবে এবং এটি ভবিষ্যতে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
অতীতের আলোচনা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এরপর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রস্তাবনা আরও পরিমার্জিত করা হয়।
কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলোচনার শেষ পর্যায়ে দলগুলোর স্বাক্ষর নিয়ে সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রদান করা হবে। এটি দেশজুড়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে এবং সংবিধান অনুযায়ী সংস্কার বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সমাজ ও গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
জাতীয় সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে এই আলোচনা ব্যাপকভাবে নজর কাড়ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কমিশনের উদ্যোগ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নাগরিকদের একাংশ বলেছেন, “কমিশনের সক্রিয় পদক্ষেপ দেশের জন্য এক ইতিবাচক সংকেত।” অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোও বিষয়টির গুরুত্ব স্বীকার করেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই আলোচনা দেশের রাজনীতি ও সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক হিসেবে ধরা হচ্ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কমিশনের ধারাবাহিক বৈঠক এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসরণ করে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করার আশা করা হচ্ছে। এটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্র এবং সংবিধান রক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
MAH – 13166 I Signalbd.com