বাংলাদেশ

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরুতে বিলম্ব

Advertisement

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দীর্ঘদিন আগে। কিন্তু সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করতে এখনও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না পাওয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার চূড়ান্ত নির্দেশনার অপেক্ষার কারণে বিমানবন্দর উদ্বোধনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিকল্পনা বিলম্বিত

প্রাথমিকভাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কক্সবাজার-কলকাতা-ঢাকা রুটে সাপ্তাহিক একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করেছিল। তবে সরকারি অনুমোদন না থাকার কারণে সংস্থাটি এখনও টিকিট বিক্রি শুরু করতে পারেনি। বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “কক্সবাজার বিমানবন্দর কখন আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক হবে, এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত নির্দেশনা পাইনি। তাই কলকাতা রুটের টিকিট বিক্রি শুরু করা যায়নি।”

বিমানের কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরুর সুনির্দিষ্ট সময় না থাকায় যাত্রীদের বুকিং প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে ফ্লাইটের বাজারজাতকরণ এবং যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য এখনও অনিশ্চিত।

সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় বেবিচক

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর সদস্য (অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান জানিয়েছেন, বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, “৫ অক্টোবর এই প্রস্তাব অনুমোদনের সম্ভাবনা ছিল। আশা করছি খুব শীঘ্রই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এর অনুমোদন পাওয়া যাবে।”

মেহবুব খান আরও জানান, বিষয়টি আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও)-কেও জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করার দায়িত্ব পুরোপুরি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওপর রয়েছে। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি।

কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন প্রস্তুত

কক্সবাজার বিমানবন্দরের পরিচালক গোলাম মুর্তজা হোসেন জানান, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। নতুন টার্মিনাল ভবন চালু হলেও বর্তমানে যাত্রীরা পুরোনো ভবন দিয়েই যাত্রা করবেন।

নতুন টার্মিনাল ও রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস ভূঁইয়া জানিয়েছেন, নতুন টার্মিনাল ভবনের প্রায় ৮৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ভবন সম্পূর্ণ কার্যক্রমে সক্ষম হওয়ার আশা করছেন তিনি। বর্তমানে ভবনের অভ্যন্তরে টাইলিং, বিদ্যুৎ সংযোগ, এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ চলছে।

৩৬২ কোটি টাকার এ টার্মিনাল নির্মাণ করছে চায়না রেলওয়ে ফার্স্ট গ্রুপ এবং ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ভবনের বাইরের কাচের প্যানেল স্থাপন প্রায় শেষ হয়েছে, বোর্ডিং ব্রিজ এবং গাড়ি পার্কিংয়ের কাজও সমাপ্তির কাছাকাছি।

রানওয়ে সম্প্রসারণ ধীরগতি

অন্যদিকে, এক হাজার ৭৯৪ কোটি টাকার রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে ধীর। চীনের সিওয়া আইডব্লিউইবি ও সিসিইসি যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, এই প্রকল্পটি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা।

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে হজরত শাহ আব্দুল মালেকের নামে নামকরণের দাবি

নাগরিকদের মধ্যে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে স্থানীয় আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হজরত শাহ আব্দুল মালেকের নামে নামকরণের দাবি উঠেছে। কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, “হজরত মালেক শাহ ছিলেন কক্সবাজারের একজন কীর্তিমান আধ্যাত্মিক পুরুষ। তার নামে বিমানবন্দর নামকরণ করলে স্থানীয় জনগণ ও পর্যটকরা উভয়ই খুশি হবে।”

পর্যটন ও অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা

কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিদেশি পর্যটকদের আগমন বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি হোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন, স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও খাদ্যশিল্পে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে।

হোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, “আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে পর্যটন খাতে গতি বৃদ্ধি পাবে। দেশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে কক্সবাজার আরও জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত হবে।”

এছাড়া, আন্তর্জাতিক সম্মেলন, করপোরেট ইভেন্ট এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনও সহজ হবে, যা স্থানীয় কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে।

পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বিমানবন্দর সংলগ্ন সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সড়ক সম্প্রসারণ ও যানবাহন চলাচলের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ চলছে। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় পর্যটকদের সুবিধার্থে নতুন পরিবহন চ্যানেল ও বাস সার্ভিস চালু করা হবে।

আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর: কক্সবাজারের নতুন পরিচয়

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের হিসেবে উন্নীত করা দেশের পর্যটন খাতের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে কক্সবাজার শুধু সমুদ্র সৈকতের জন্যই নয়, ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বাড়াবে।

বেবিচক ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই নিরাপত্তা, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, বিমানসেবা ও যাত্রী সেবা সংক্রান্ত সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। শুধু সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষা এখন।

যদিও কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরুতে এখনও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে, তবে সব প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পাওয়ার পর খুব শীঘ্রই প্রথম আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাত্রীরা কক্সবাজারের স্বপ্নময় সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্রে পৌঁছাবেন। এই উদ্যোগ কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

MAH – 13164 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button