
সরকারি কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পরিবর্তনের জন্য গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন নতুন স্কেলের জন্য। নতুন কাঠামো কার্যকর হলে মূল বেতন দ্বিগুণ হতে পারে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, কমিশন আগামী ছয় মাসের মধ্যে নতুন স্কেলের সুপারিশ করবে।
নতুন পে স্কেলের প্রেক্ষাপট
জাতীয় বেতন কমিশন দীর্ঘ ১০ বছরের বিরতির পর পুনরায় গঠিত হয়েছে। এই সময়ে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। কমিশনের এক সদস্য জানিয়েছেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতি এবং জীবনের ব্যয় বিবেচনা করে নতুন স্কেল প্রণয়ন করা হবে। এছাড়াও, বর্তমান সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত নিয়ে (১২:১, ১০:১, ৮:১) যে আলোচনা চলছে, তা কমিশনের নজরে আছে।
কমিশন বিবেচনা করছে, বর্তমানে থাকা ২০টি গ্রেড ভেঙে গ্রেড কমিয়ে বেতনের অনুপাতে সামঞ্জস্য করা হবে। এতে করে মূল বেতনের বৃদ্ধি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। সদস্যদের ইঙ্গিত অনুযায়ী, নতুন স্কেলে মূল বেতন দ্বিগুণ পর্যন্ত হতে পারে। এমন হলে, সর্বোচ্চ গ্রেড-১ এর বেতন দাঁড়াবে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন গ্রেড-২০ এর বেতন হবে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা।
পূর্ববর্তী পে স্কেল ও তুলনা
সর্বশেষ ২০১৫ সালে পে স্কেল ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন ১ম গ্রেডে মূল বেতন ১৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ হাজার টাকা থেকে ৭৮ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছিল। সর্বনিম্ন বেতন ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার ২৫০ টাকা করা হয়, যা ২০১ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করেছিল।
নতুন স্কেলের কার্যক্রমে এই পূর্ববর্তী বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি ও জীবনের ব্যয় বৃদ্ধি নতুন স্কেলের জন্য মূল প্রেক্ষাপট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রভাব ও প্রত্যাশা
নতুন পে স্কেল কার্যকর হলে সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। বিশেষ করে নিম্নগ্রেডের কর্মচারীরা উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাবেন। এটি তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, সরকারি বেতন বৃদ্ধি করলে স্থানীয় বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বাজেটের ওপর চাপও বৃদ্ধি পাবে, তাই অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
সরকারের অবস্থান
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নতুন বেতন কাঠামো অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই গেজেটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের জন্য অপেক্ষা করা হবে না। এছাড়া, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে।
প্রাথমিকভাবে নতুন পে স্কেল ২০২৬ সালের শুরু (জানুয়ারি/মার্চ/এপ্রিল) থেকে কার্যকর হতে পারে। সরকার ইতোমধ্যেই বাজেটের প্রস্তুতি শুরু করেছে যাতে নতুন বেতন কাঠামো সময়মতো বাস্তবায়িত হয়।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন স্কেল বাস্তবায়ন হলে সরকারি কর্মচারীদের মানসিক প্রেরণা বৃদ্ধি পাবে। তবে বাজেট এবং সরকারি অর্থনীতির ওপর এর প্রভাবও বিবেচনা করা জরুরি। কিছু অর্থনীতিবিদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বাজেট সীমিত থাকায় নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ আসতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পে স্কেলের এই বৃদ্ধি সাধারণ জনগণের মধ্যে সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। এছাড়া কর্মীদের কাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
পরবর্তী ধাপ
জাতীয় বেতন কমিশন আগামী ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ দেবে। এরপর এটি গেজেটে প্রকাশিত হবে এবং কার্যকর হবে। সরকারি কর্মচারীরা এখন নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হওয়ার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন।
পেশাদাররা মনে করছেন, নতুন স্কেল কার্যকর হলে এটি দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হবে এবং কর্মীদের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
এম আর এম – ১৬২১,Signalbd.com