
ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার মুন্সি গ্রামে শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে এক শ্বশুরবাড়িতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে যুবককে গলা কেটে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ফরহাদ ব্যাপারী ওরফে ঠান্ডু (৩৫) নিজের ঘরে শুতে থাকা অবস্থায় স্ত্রী লাবণী আক্তার (২৮), শাশুড়ি শহিদা বেগম (৪৯) এবং দাদিশাশুড়ি জনকী বেগম (৬২) তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়। পাশের ঘরে হত্যার প্রস্তুতির জন্য একটি গর্তও খোঁড়া হয়েছিল। ফরহাদ চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা এসে তাকে উদ্ধার করেন।
সদরপুর থানার পুলিশ ভুক্তভোগীর স্ত্রী লাবণী আক্তারকে আটক করেছে। শাশুড়ি ও দাদিশাশুড়ি পলাতক রয়েছে। আহত ফরহাদকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল ও প্রাথমিক তদন্ত
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফরহাদকে রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল। তিনি ঘুমিয়ে পড়ার পর স্ত্রী ও শাশুড়ি-পত্নী কাস্তে দিয়ে তার গলা কাটার চেষ্টা করেন। হত্যার আগে পাশের ঘরের বারান্দায় গর্ত খোঁড়া হয়েছিল, সম্ভবত মরদেহ লুকানোর উদ্দেশ্যে। ফরহাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকদেব রায় জানান, “এই হত্যাচেষ্টা পূর্বপরিকল্পিত এবং টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ফরহাদের স্ত্রী লাবণীকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।”
ভুক্তভোগী ফরহাদ ব্যাপারী ঢাকার একটি ওয়ার্কশপের ব্যবসায় জড়িত। তিনি ভাষানচর ইউনিয়নের মুন্সি গ্রামের প্রবাসী জাহাঙ্গীর মিয়ার কন্যা লাবণী আক্তারের সঙ্গে বিয়ে করেছেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জমি কেনার জন্য ফরহাদ ১১ লাখ টাকা প্রদান করেছিলেন। স্ত্রী ও শাশুড়ি টাকা আত্মসাৎ করার পর এই হত্যাচেষ্টা সংঘটিত হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
পুলিশি ব্যবস্থা ও অনুসন্ধান
ঘটনার পরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং পলাতক দুইজনের খোঁজ চলছে। ফরহাদকে চিকিৎসা শেষে সুরক্ষিত স্থানে রাখা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, মামলার তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা এলাকার সামাজিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলেছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, এমন পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা খুবই চাঞ্চল্যকর। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পারিবারিক অর্থনৈতিক লেনদেন ও আত্মসাতের প্রেক্ষাপটে এমন হত্যাচেষ্টা ঘটতে পারে। সামাজিক সচেতনতা ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা অপরিহার্য।
বিশ্লেষণ
এই ঘটনা স্থানীয়ভাবে এক ধরনের সামাজিক সচেতনতা ও পুলিশি তৎপরতার প্রশ্ন তুলেছে। পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা থেকে বোঝা যায়, পারিবারিক বিতর্ক ও আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সঠিক পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক মন্তব্যে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবে।
ফরিদপুরের সদরপুরে শ্বশুরবাড়িতে সংঘটিত এই হত্যাচেষ্টা এলাকার মানুষকে শক করেছে। হত্যার উদ্দেশ্য পারিবারিক অর্থনৈতিক লেনদেন ও টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। পুলিশ তদন্ত অব্যাহত রাখছে এবং পলাতকদের গ্রেফতারে তৎপর।
এম আর এম – ১৬১৪,Signalbd.com