বিশ্ব

সুর পাল্টালেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট, সমর্থন দিলেন ট্রাম্পের গাজা নীতিকে

Advertisement

দীর্ঘদিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিকে কড়া সমালোচনা করলেও এবার গাজার সংকট সমাধানে ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। দুই নেতার আবেগঘন বিতর্কের মধ্যে এ ঘুরে দাঁড়ানো কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুন মোড় দিয়েছে।

পেত্রোর নতুন অবস্থান: কোথা থেকে শুরু হল বদলটা

গতকাল শুক্রবার সমর্থকদের এক জনসভায় পেত্রো বলেন, গাজায় মানুষের দুর্দশা শেষ করতে আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর যেকোনো উদ্যোগকে কলম্বিয়া স্বাগত জানাবে এবং প্রয়োজন হলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। সূত্রগুলো বলছে, পেত্রো এমনও বলেছেন যে শান্তি রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত কোনো পদক্ষেপে কলম্বিয়া অংশ নিতে প্রস্তুত। এই বক্তব্য রাজনৈতিকভাবে চরম চাঞ্চল্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ পেত্রো কয়েক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প ও ইসরায়েলের নীতিকে কঠোর ভাষায় দুষেছিলেন এবং এমনকি ট্রাম্পকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আইনের আওতায় আনার কথা বলেছিলেন।

আগের বিবাদ ও ভিসা বিতর্ক

পেত্রোর এবং ট্রাম্প পন্থার মধ্যে টানাপোড়েন নতুন নয়। কয়েক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কের বাইরে পেত্রো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং ট্রাম্পের নীতিকে ‘গণহত্যায় সহায়তা’ বলেছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর তাঁর ভিসা বাতিল করে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে কড়া করে তুলেছিল। তখন পেত্রো পর্যন্ত বলেছেন—আলোচনায় যদি যুদ্ধাপরাধের প্রশ্ন ওঠে, আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রতিপত্তি প্রয়োগ করা উচিত। এ সব বিবাদ থেকে হঠাৎ সুরপাল্টা কেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা তত্ত্বে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রতিফলন

পেত্রোর হঠাৎ সমর্থন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নট-অ্যান্ড-বোল্ট ধাঁচের একটি নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি; তবে কূটনীতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কলম্বিয়ার এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে অঞ্চলে কূটনৈতিক ম্যান্ডেট জোরদারে ব্যবহার করতে সাহায্য করতে পারে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের পক্ষ থেকে পেত্রোর বদলেশক্তি নিয়ে সংশয়ও আছে—কখনও কড়া সমালোচনা আর এখন সমর্থন, এ সব জায়গায় সম্পর্কের কার্যকারিতা ও নৈতিকতার প্রশ্ন ফিরে আসে।

কারা খুশি, কারা খতিয়ে দেখছে

কলম্বিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও পেত্রোর দাবি বিভাজন তৈরি করেছে। তাঁর সমর্থকরা এটাকে বাস্তববোধপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ বলে ধারণা করছেন—যেখানে কলম্বিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানবিক উদ্যোগে অংশ নিয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করতে পারে। কিন্তু বিরোধীরা এটিকে নৈতিক ও কৌশলগতভাবে অনিশ্চিত বলে অভিযুক্ত করছে এবং প্রশ্ন তুলছে এটা কি কোনো বহিরাগত চাপের ফল নয়। বিশেষত পেত্রোর আগের বক্তব্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক পরিবর্তনকে অনেকেই সুবিধাবাদী মনে করছেন।

কেন বদলে গেল পেত্রোর কণ্ঠস্বর?

বিশ্লেষকরা বেশ কয়েকটি কারণ দেখছেন। প্রথমত, রাজনৈতিক বাস্তবতা—আন্তর্জাতিক মঞ্চে চাপ সামলে কূটনৈতিক সহযোগিতা বাড়িয়ে কলম্বিয়া নিজ স্বার্থে লাভবান হতে পারে। দ্বিতীয়ত, গ্লোবাল মানবিক সংকটের সঙ্গে যুক্ত নীতি-দলিলে সরাসরি কাজ করার যৌক্তিকতা; তৃতীয়ত, অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত কূটনৈতিক চাপ—বিশেষ করে এমন সময় যখন কলম্বিয়ার কাছে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন হতে পারে। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, পেত্রোর আগে করা উগ্র অভিযোগ ও রাজনৈতিক কট্টরতার পর হঠাৎ এই সহমর্মিতা স্থানীয় ভোটব্যাংক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির মধ্যে একটি সূক্ষ্ম কৌশলও হতে পারে।

ভবিষ্যৎ কুশল ও প্রশ্নসমূহ

পেত্রোর এই অবস্থান বদলিলেই কি কলম্বিয়ার কূটনীতি মোটেই বদলে যাবে? নয়তো এটি কেবল একটি কৌশলগত অস্থায়ী চলচিত্র? আন্তর্জাতিক ঐক্য কিংবা সংঘাতমোচনের ক্ষেত্রে কলম্বিয়ার ভূমিকা কীভাবে রূপ নেবে—এসব প্রশ্ন এখন প্রকাশ্যে উঠেছে। পাশাপাশি, গাজায় মানবিক সহায়তা সঠিকভাবে পৌঁছানো এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের একাগ্রতা কতটা দেখানো হবে, তা গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্ন।

পেত্রোর সুরপাল্টা—ট্রাম্পের গাজা নীতিকে সমর্থন—কেবল একটি ব্যক্তিগত বা দেশি সিদ্ধান্ত নয়; এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। নৈতিকভাবে ফাঁকফোকর ও কৌশলগত সুবিধাভোগীর ছায়া উভয়ই আছে। ইতিহাস বলবে, এই সিদ্ধান্ত কীভাবে গাজার সংকট ও কলম্বিয়ার প্রতিপত্তি-দুইই প্রভাবিত করবে।

এম আর এম – ১৬০৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button