
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা আজ নতুন মাত্রা লাভ করেছে। ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী পাকিস্তানকে সরাসরি হুমকি দিয়েছেন যে, তারা যদি সীমান্তে রাষ্ট্র-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ বন্ধ না করে, তাহলে পাকিস্তানকে ভূগোলের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হবে। এই কথা বলা হয়েছে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনে, যেখানে অপারেশন সিঁদুর ১.০-এর সাফল্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, “আমরা আগে সংযম দেখিয়েছিলাম, কিন্তু এবার কোনো সংযম থাকবে না। পাকিস্তানকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলব যাতে তারা নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়।”
এই হুমকি শুধুমাত্র কথার কথা নয়, বরং ভারতের সামরিক শক্তির একটি শক্তিশালী বার্তা। গত মে মাসে চালানো অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানের ভিতরে সন্ত্রাসী ক্যাম্পগুলোতে হামলা করে ভারত প্রমাণ করেছে যে, তারা আর কোনো আক্রমণ সহ্য করবে না। এই অপারেশনে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে (পিওকে) অবস্থিত সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। জেনারেল দ্বিবেদী দাবি করেন, “যদি আমরা তখন ব্যবস্থা না নিতাম, তাহলে পাকিস্তান এই সত্যকে চিরতরে আড়াল করে দিত। পাকিস্তান নিজ দেশে সন্ত্রাসবাদকে লালন-পালন করে, এবং এটাই তাদের অস্তিত্বের জন্য বিপদ।”
অপারেশন সিঁদুর: ভারতের সামরিক সাফল্যের নতুন অধ্যায়
অপারেশন সিঁদুর ১.০ কী? এটি ভারতের সামরিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। গত মে মাসে, পাকিস্তান থেকে চালানো সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনী এই অপারেশন চালায়। সংবাদ সূত্র অনুসারে, এতে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত জৈশ-ই-মোহাম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবা-সমর্থিত ক্যাম্পগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং স্পেশাল ফোর্সের সমন্বিত অভিযানে এই ঘাঁটিগুলো ধ্বংস হয়েছে, যাতে শতাধিক সন্ত্রাসী নিহত হয়।
এই অপারেশনের পটভূমি হলো ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা এবং বালাকোট অ্যাটাকের ধারাবাহিকতা। ২০১৯ সালে পাকিস্তান-ভিত্তিক জৈশ-ই-মোহাম্মদের সন্ত্রাসীরা পুলওয়ামায় ভারতীয় সেনাদের উপর হামলা চালিয়ে ৪০ জনেরও বেশি সেনাকে হত্যা করে। তার প্রতিক্রিয়ায় ভারত বালাকোটে সন্ত্রাসী ক্যাম্পে বিমান হামলা চালায়। কিন্তু অপারেশন সিঁদুর আরও গভীর এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত। এতে ড্রোন এবং স্যাটেলাইট গাইডেড মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভারতের সামরিক ক্ষমতার প্রমাণ।
জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, যিনি ৩০ জুন ২০২৪ সালে ভারতের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, এই অপারেশনের সাফল্যকে তাঁর নেতৃত্বের একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর পূর্বের কর্মজীবন দেখলে বোঝা যায় কেন তিনি এমন কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। উপেন্দ্র দ্বিবেদী ১৯৮৩ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং চিনা এবং পাকিস্তান সীমান্তে বিভিন্ন অভিযানে অংশ নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতের সেনাবাহিনী এখন আরও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত, যেমন রাফাল ফাইটার জেট এবং ব্রহ্মোস মিসাইল।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ঐতিহাসিক পটভূমি: কাশ্মীর ইস্যুর ছায়া
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার মূল কারণ হলো কাশ্মীর। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময় থেকেই এই অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চারটি যুদ্ধ হয়েছে – ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীন হয়, যা পাকিস্তানের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কিন্তু কাশ্মীর এখনও অমীমাংসিত।
পাকিস্তান সরকারের অভিযোগ, ভারত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। কিন্তু ভারত বলে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে সমর্থন করে। আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন ইউএন এবং ইউএসওয়ার রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তানের আইএসআই (ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স) সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন করে। উদাহরণস্বরূপ, ওসামা বিন লাদেনকে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে লুকিয়ে রাখার ঘটনা বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ২০১৯ সালে ভারত জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ স্থিতিশীলতা বিলুপ্ত করে, যা পাকিস্তানকে ক্ষুব্ধ করে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের নেতৃত্বে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বেড়েছে। পাকিস্তানের অর্থনীতি ইতিমধ্যে সংকটে, এবং এই হুমকি তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া: কূটনৈতিক এবং সামরিক প্রস্তুতি
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অপারেশন সিঁদুরকে “সীমান্ত লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করে এবং জাতিসংঘে অভিযোগ দায়ের করেছে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির বলেছেন, “আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করব, এবং যেকোনো আক্রমণের জবাব দেব।” পাকিস্তান চীনের সাথে মিলে সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (সিপেক) প্রকল্পের মাধ্যমে পাকিস্তান চীন থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে, যেমন জেএফ-১৭ থান্ডার ফাইটার জেট।
কিন্তু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা তাদের দুর্বল করেছে। তালেবানের উত্থান এবং বেলুচিস্তানে বিদ্রোহ পাকিস্তানের সামরিক শক্তিকে বিভক্ত করেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া যেমন বিবিসি এবং আল জাজিরার রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তানের জিডিপি ২০২৪ সালে মাত্র ২.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সামরিক ব্যয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। ভারতের এই হুমকি পাকিস্তানকে শান্তি আলোচনার দিকে ঠেলে দিতে পারে, কিন্তু ইতিহাস বলে যে এমন উত্তেজনা যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: বিশ্বের দৃষ্টি কেন সতর্ক?
এই হুমকির পর বিশ্বের শক্তিগুলো সতর্ক হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমরা উভয় পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানাই।” রাশিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলো পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই ঘটনাকে “অস্থিরকারী” বলে অভিহিত করে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির জন্য এই উত্তেজনা বিপজ্জনক। ভারতের জিডিপি ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যখন পাকিস্তানের মাত্র ৩৪০ বিলিয়ন ডলার। যুদ্ধ হলে এই অঞ্চলের বাণিজ্য ব্যাহত হবে, যা বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশকেও প্রভাবিত করবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “আমরা শান্তির পক্ষে এবং কোনো যুদ্ধ চাই না।”
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা: শান্তি না যুদ্ধ?
জেনারেল দ্বিবেদীর হুমকি শুধু সামরিক নয়, বরং কূটনৈতিক। ভারত চায় পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করুক এবং কাশ্মীর ইস্যুতে শান্তি আলোচনা শুরু করুক। কিন্তু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এটাকে জটিল করে তুলেছে। ইমরান খানের পিটিআই পার্টি এবং নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন-এর মধ্যে বিভেদ পাকিস্তানকে দুর্বল করেছে।
যদি উত্তেজনা না কমে, তাহলে অপারেশন সিঁদুর ২.০ হতে পারে। ভারতের সামরিক বাজেট ২০২৪-২৫ সালে ৬ লক্ষ কোটি টাকা, যা পাকিস্তানের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হুমকি পাকিস্তানকে আলোচন
MAH – 13152 I Signalbd.com