আবহাওয়া

গভীর নিম্নচাপে উত্তাল বঙ্গোপসাগর, সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত

Advertisement

নিম্নচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে রূপান্তর

পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল ৬টায় এই গভীর নিম্নচাপটি অবস্থান করছিল—

  • চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে
  • কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৮৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে
  • মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে
  • পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে

আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, নিম্নচাপটি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমমুখী অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্য ও ঝোড়ো হাওয়া বইছে।

সাগরে উত্তাল ঢেউ, জারি করা হলো সতর্ক সংকেত

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ছুটছে। দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে এটি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে সমুদ্র অতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের চারটি সমুদ্রবন্দর—

  • চট্টগ্রাম
  • কক্সবাজার
  • মোংলা
  • পায়রা

এসব বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

জেলেদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা

আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে—
উত্তর বঙ্গোপসাগরে থাকা সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে নিরাপদে চলাচল করতে হবে।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে যেতে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
ঝোড়ো হাওয়ার কারণে যেকোনো সময় নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

টানা বৃষ্টির আভাস

গভীর নিম্নচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে—

  • ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
  • উপকূলীয় এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
  • পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এরই মধ্যে আশ্বিনের বৃষ্টিতে ঢাকার বহু সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। নাগরিক দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ।

সরকারের প্রস্তুতি

জানা গেছে, নিম্নচাপের প্রভাবে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার জরুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে

  • উপকূলীয় জেলাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
  • সিপিপি (সাইক্লোন প্রস্তুতি কর্মসূচি) স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
  • ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার ও প্রস্তুত করা হচ্ছে।
  • উপকূলবর্তী স্কুল ও মাদরাসাগুলোও জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হবে।

অতীতের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপ প্রায়শই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। ইতিহাস বলছে—

  • ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
  • ২০০৭ সালের সিডর ৩,০০০ এর বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।
  • ২০০৯ সালের আইলা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ ক্ষতি করেছিল।
  • ২০২০ সালের আম্পান একশ’র বেশি মানুষকে প্রাণ হারাতে বাধ্য করেছিল এবং কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

তবে বর্তমানে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও আগাম সতর্কবার্তার কারণে প্রাণহানির হার অনেক কমেছে।

সাধারণ মানুষের করণীয়

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সতর্কতা মানলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। তাই সাধারণ মানুষকে—

  1. আবহাওয়া অফিস ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
  2. অপ্রয়োজনীয়ভাবে সমুদ্রে বা নদীতে যাওয়া যাবে না।
  3. ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে।
  4. নৌকা, ট্রলার, জাহাজ নিরাপদ স্থানে বেঁধে রাখতে হবে।
  5. মোবাইল ফোনে চার্জ রাখুন এবং জরুরি ওষুধ ও শুকনো খাবার সঙ্গে রাখুন।

বিশেষজ্ঞ মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন—
“প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি অতিবৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে নদী-নালা উপচে পড়তে পারে, পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।”

বাংলাদেশে অক্টোবর মাসকে ঘূর্ণিঝড় মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ দ্রুত ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদিও বর্তমান নিম্নচাপ এখনো ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়নি, তবে এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে, যা সতর্কবার্তার জন্য যথেষ্ট।

সরকার, আবহাওয়া অফিস, স্থানীয় প্রশাসন এবং জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে—এমনটাই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

MAH – 13121 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button