
দেশে ফেরার খবর
জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদে (United Nations General Assembly – UNGA 80) যোগদান শেষে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল ৯টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং নিশ্চিত করেছে যে, দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দরে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের বিভিন্ন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
নিউইয়র্ক থেকে বিদায়
এর আগে বুধবার (১ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি ঢাকা অভিমুখে রওনা হন। বিদায়ের সময় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম। তারা উভয়েই প্রধান উপদেষ্টাকে শুভকামনা জানিয়ে বিদায় জানান।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ
জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও আলোচনায় বক্তব্য রাখেন। তিনি মূলত বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDGs) অর্জন এবং শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।
জাতিসংঘে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি, সামাজিক উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অঙ্গীকারের বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরেন।
জলবায়ু পরিবর্তন ও বাংলাদেশ
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা নিশ্চিত করে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সমস্যার শিকার হলেও আমরা সমাধানের অংশ হতে চাই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ প্রযুক্তি ও টেকসই কৃষির মাধ্যমে আমরা পথ দেখাতে পারি।”
বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক
জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশ নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, কানাডা এবং আরও কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা সংকট এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ ছাড়া এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। তিনি মিয়ানমারের উপর কার্যকর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ হিসেবে ড. ইউনূসের বক্তব্য বিশ্ব নেতাদের কাছে গুরুত্ব সহকারে গৃহীত হয়েছে।
অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য উদ্ধৃত হয়েছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র্য বিমোচন প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসিত হয়েছে।
দেশে ফেরার পর করণীয়
ঢাকায় ফিরে এসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া তিনি রাষ্ট্রপতি ও সেনাবাহিনী প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে ধারণা করা হচ্ছে, জাতিসংঘ সফরের অভিজ্ঞতা তিনি দেশে চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে ব্যবহার করবেন।
বিশ্লেষকদের মন্তব্য
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতিসংঘ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে শান্তি, জলবায়ু পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘে গিয়ে বাংলাদেশের কণ্ঠস্বরকে বিশ্বে তুলে ধরেছেন। এটি দেশের জন্য ইতিবাচক দিক।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ সফর এবং দেশে ফেরা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন মাত্রা দিয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে দেশটি বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
MAH – 13120 I Signalbd.com