
নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি সর্বাধুনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ফাতাহ-৪ নামের এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৭৫০ কিলোমিটার, যা শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটির সামরিক মুখপাত্র আইএসপিআর এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ফাতাহ-৪: পাকিস্তানের নতুন সংযোজন
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানায়, ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য এই সারফেস-টু-সারফেস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র অত্যাধুনিক এভিওনিকস ও উন্নত ন্যাভিগেশন সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত। ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রকৃতির খুব কাছাকাছি পথ ধরে উড়তে সক্ষম, ফলে এটি রাডারের চোখ এড়িয়ে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারবে।
রকেট ফোর্স কমান্ডের অংশ হিসেবে যুক্ত হওয়া ফাতাহ-৪ পাকিস্তানের প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। পাল্লা, ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ও টিকে থাকার সক্ষমতা — সবদিক থেকেই এই ক্ষেপণাস্ত্রকে পাকিস্তানের সামরিক ভাণ্ডারের একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করেন শীর্ষ কর্মকর্তারা
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ, বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা। উৎক্ষেপণের পর সেনা সদস্য, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান ও তিন বাহিনীর প্রধান।
সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সফলতা পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে।
ফাতাহ সিরিজের ধারাবাহিকতা
ফাতাহ সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে পাকিস্তান এর আগেও মহড়া চালিয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে “ইন্দুস” সামরিক মহড়ার অংশ হিসেবে ১২০ কিলোমিটার পাল্লার ফাতাহ সিরিজের আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র দু’বার পরীক্ষা করা হয়েছিল।
এবারের ফাতাহ-৪ এর পাল্লা ও প্রযুক্তি অনেক বেশি উন্নত। সামরিক সূত্র মতে, এটি শুধু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকার্যকরই করবে না, বরং কৌশলগত দিক থেকেও পাকিস্তানকে বাড়তি সুবিধা এনে দেবে।
আঞ্চলিক প্রভাব
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে বিভিন্ন ঘটনার কারণে সেই উত্তেজনা আরও বেড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, ফাতাহ-৪ এর সফল পরীক্ষা শুধু পাকিস্তানের সক্ষমতা প্রদর্শনই নয়, বরং ভারতের উদ্দেশেও একটি স্পষ্ট বার্তা।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর এর প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকে। কারণ, এ ধরনের আধুনিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে আরও জটিল করতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক মহল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে অতীতে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অনেকেই মনে করছেন, ফাতাহ-৪ এর মতো দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান এর মাধ্যমে প্রমাণ করতে চায় যে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শুধু আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলা করার জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক চাপ সামলাতেও যথেষ্ট শক্তিশালী।
অন্যদিকে সমালোচকদের মত, অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় এ ধরনের সামরিক ব্যয় দেশের অভ্যন্তরে নতুন প্রশ্ন তুলতে পারে। অনেকের মতে, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করার চেয়ে সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে পাকিস্তান।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা
পাকিস্তানের এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারত ইতিমধ্যেই উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করছে। এখন দেখা যাবে, পাকিস্তানের এই নতুন সক্ষমতা আঞ্চলিক কূটনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলবে।
ফাতাহ-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণ পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এই অগ্রগতি কি কেবল আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে, নাকি আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টাতে কৌশলগত প্রচেষ্টা? সময়ই বলে দেবে, এই সামরিক প্রদর্শনী দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে।
এম আর এম – ১৫৮৩,Signalbd.com