
নিউইয়র্কে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি জানান, কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে, যার ফলে দেশের জন্য আসন্ন কয়েক মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন,
“কিছু আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। কে কার হয়ে কাজ করছে, আমরা জানি না। প্রচুর অর্থ ঢালা হচ্ছে, যার সুবিধাভোগী আছে বাংলাদেশে এবং দেশের বাইরে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বৈঠকের বিস্তারিত
বৈঠকটি নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি, সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত পদক্ষেপের বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত অবহিত করেন।
ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন যে, অক্টোবরের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করবে। এই সনদে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি ও প্রচার
ড. ইউনূস বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সরকার ব্যাপক প্রচারাভিযান চালাবে। এই প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া, ভোটার নিবন্ধন এবং অংশগ্রহণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। বিশেষভাবে নারীদের ভোট দেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, দেশের তরুণ প্রজন্ম কাঠামোগত সংস্কারের জন্য আন্দোলন করেছে, যাতে ভবিষ্যতে ভোট প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
আন্তর্জাতিক মহলের প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ
ড. ইউনূস আরও বলেন, কিছু আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। এই প্রক্রিয়াটি খুবই সংগঠিত এবং দেশভিত্তিক ও আন্তর্জাতিকভাবে এর সুবিধাভোগী রয়েছে। এই ধরণের পদক্ষেপ দেশ ও জনগণের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
তিনি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন দেশের অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার কাজ করে। ড. ইউনূস বলেন,
“চুরি করা অর্থ ফেরত আনা অত্যন্ত জটিল আইনি প্রক্রিয়া, তবে ব্যাংকগুলো যেন এই ধরনের সম্পদ লুকাতে না পারে, সে জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো সোচ্চার হোক। এই অর্থ আসলে জনগণের।”
সরকারের সংস্কার উদ্যোগ
ড. ইউনূস বৈঠকে জানিয়েছেন, দেশের মূল খাতগুলোতে সংস্কারের সুপারিশ দেওয়ার জন্য ১১টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এসব সুপারিশের ওপর কাজ করছে। এছাড়াও সরকার গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করেছে, যা নিয়মিত প্রতিবেদন প্রদান করছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রক্রিয়াটি ধরে রাখার জন্য যথাসম্ভব চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যাতে সংসদে বসার পরও সংস্কার ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ড. ইউনূসের এই মন্তব্য দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তাকে তুলে ধরেছে। বিশ্লেষকরা বলেন, আন্তর্জাতিক মহলের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় সরকারের সতর্কতা গুরুত্বপূর্ণ।
জন সিফটন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর, বলেন, “যত বেশি সম্ভব সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে চাপ দিতে হবে। এটি নিশ্চিত করবে যে সংসদে বসার পরও প্রক্রিয়াটি চলতে থাকবে।”
প্রধান উপদেষ্টার এই মন্তব্য বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তার দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছে। আসন্ন কয়েক মাসে সরকারের প্রচেষ্টা, রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দেশকে একটি সুষ্ঠু ও মুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ড. ইউনূসের বক্তব্য এবং সরকারের প্রস্তুতি দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। আন্তর্জাতিক মহল যে কোনও প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে তার মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
এম আর এম – ১৫৮০,Signalbd.com