মালিকদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান, রাজশাহী-ঢাকা রুটে আবারও ধর্মঘটে পরিবহন শ্রমিকরা

রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী পরিবহন রুটে আবারও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। মালিকদের আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে সোমবার রাত ১০টার দিকে শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে আন্দোলন শুরু করেন তারা। শ্রমিকরা ন্যায্য বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।
ধর্মঘটের ঘটনা
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোর থেকে ঢাকাগামী বাস টানা চারদিন বন্ধ থাকার পর দুপুরে মালিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। মালিকদের দাবি ছিল, আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে এবং বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে। তবে কিছুক্ষণ পরেই শ্রমিকদের একাংশ মালিকদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেন এবং পুনরায় বাস বন্ধ করে ধর্মঘট শুরু করেন।
শ্রমিকদের অভিযোগ, একই রুটে চলাচলকারী অন্যান্য বাসের শ্রমিকদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি মানা হয়েছে, কিন্তু তাদের দাবি মানা হয়নি। এই কারণে তারা কাজ করতে অস্বীকার করেছেন।
গত মাসে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাজশাহী-ঢাকা রুটে একাধিকবার বাস বন্ধ হয়েছে। সর্বশেষ ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মালিক-শ্রমিক বৈঠকে চালকের বেতন ট্রিপপ্রতি ১২৫০ থেকে ১৭৫০, সুপারভাইজারের ৫০০ থেকে ৭৫০ এবং সহকারীর ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই মালিকরা বাস বন্ধ করে দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ধর্মঘটের কারণে বাস বন্ধ হওয়ার ফলে যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। চলতি মাসে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আরও দুই দফা বাস বন্ধের ঘটনা ঘটে।
মালিকদের প্রতিক্রিয়া
মালিকরা জানান, শ্রমিকরা নতুন কিছু অযৌক্তিক দাবি তুলেছেন যা মানা সম্ভব নয়। মালিকদের মতে, আগের মতো সুশৃঙ্খলভাবে বাস চলাচল নিশ্চিত করা জরুরি এবং আগামীতে কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ ধর্মঘট করা চলবে না।
মালিকদের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, বৈঠকের মাধ্যমে শ্রমিকদের যুক্তিসঙ্গত দাবি পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্মঘটের কারণে যাত্রীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
প্রভাব ও যাত্রীদের দুর্ভোগ
ধর্মঘটের কারণে রাজশাহী-ঢাকা রুটের যাত্রীরা আবারও ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। যাত্রীরা বাস না পাওয়ায় ট্যাক্সি ও অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থার ওপর চাপ বেড়েছে। অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য জরুরি যাতায়াতের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ধর্মঘটের কারণে বাণিজ্যিক কার্যক্রমও প্রভাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে যারা ঢাকা বা রাজশাহী রুটে প্রতিদিন যাতায়াত করেন তাদের জন্য এটি বড় সমস্যা।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতা না হলে ধর্মঘটের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি ও মালিকদের কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় না হলে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যা অব্যাহত থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, দীর্ঘমেয়াদে শ্রমিকদের বেতন কাঠামো এবং সুবিধা নির্ধারণে একটি নিয়মিত নীতি প্রণয়ন করা উচিত, যাতে হঠাৎ ধর্মঘটের ঘটনা এড়ানো যায়।
রাজশাহী-ঢাকা রুটে পরিবহন শ্রমিকদের পুনরায় ধর্মঘট শুরু হওয়া যাত্রীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মালিকদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা পুনরায় আন্দোলনে গিয়েছেন, যার ফলে বাস চলাচল বন্ধ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে কার্যকর সমঝোতা জরুরি।
যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বিবেচনা করে প্রশাসনও পরিস্থিতি মনিটর করছে। আগামী কয়েক দিনে বৈঠক বা আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
এম আর এম – ১৫৭৪,Signalbd.com