ওয়াশিংটনে মাঝ আকাশে হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজের সংঘর্ষ
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে মাঝ আকাশে হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজের সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের পর উড়োজাহাজটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে পটোম্যাক নদীতে পড়ে। মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ঘটনার বিবরণ:
স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টার দিকে রিগ্যান ওয়াশিংটন জাতীয় বিমানবন্দরের কাছাকাছি এই দুর্ঘটনা ঘটে। এফএএর তথ্য অনুযায়ী, পিএসএ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৫৩৪২, যা কানসাস থেকে রওনা হয়েছিল, বিমানবন্দরে অবতরণের পূর্বমুহূর্তে একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষের ফলে উড়োজাহাজটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে পটোম্যাক নদীতে পড়ে। হেলিকপ্টারটিও কাছাকাছি নদীতে বিধ্বস্ত হয়।
আরোহী ও হতাহতের তথ্য:
পিএসএ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটিতে ৬০ জন যাত্রী এবং ৪ জন ক্রু সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে, ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটিতে তিনজন মার্কিন সেনাসদস্য ছিলেন। টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, এই সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তবে তিনি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেননি।
উদ্ধার অভিযান:
দুর্ঘটনার পরপরই একাধিক সংস্থা পটোম্যাক নদীতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করে। ডুবুরিরা নদীতে তল্লাশি চালাচ্ছেন এবং জরুরি কর্মীরা তৎপর রয়েছেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর বিমানবন্দরে সব উড়োজাহাজের ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিক্রিয়া:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার বিষয়ে অবগত হয়েছেন এবং জরুরি সাড়াদান কর্মীদের অবিশ্বাস্য কর্মতৎপরতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং আরও তথ্য পাওয়ার পর বিস্তারিত জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
সম্প্রতি অন্যান্য বিমান দুর্ঘটনা:
এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে কেন্টাকিতে প্রশিক্ষণের সময় মার্কিন সেনাবাহিনীর দুটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৯ জন নিহত হন।
এছাড়া, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে অস্ট্রেলিয়ায় মহড়া চলাকালে একটি অসপ্রে মডেলের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে তিনজন মার্কিন নৌবাহিনীর সদস্য নিহত হন।
উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার সংঘর্ষের কারণ:
মাঝ আকাশে উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ সাধারণত বিরল ঘটনা। তবে, নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের সমস্যা, পাইলটের ভুল, যান্ত্রিক ত্রুটি বা খারাপ আবহাওয়ার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্তকারীরা এসব বিষয় খতিয়ে দেখেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সুপারিশ প্রদান করেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ:
এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও এভিয়েশন সংস্থাগুলো বিভিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে পাইলটদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, আধুনিক নেভিগেশন সিস্টেমের ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে সঠিক যোগাযোগ রক্ষা। তদন্তের পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নতুন নিরাপত্তা প্রোটোকল প্রণয়ন করা হতে পারে।
ওয়াশিংটন ডিসির আকাশে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা যায়।