রাজনীতি

নরসিংদীতে যুবদল নেতা সাদেক মিয়াকে গুলি করে হত্যা

Advertisement

নরসিংদীতে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

নরসিংদীর সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন আবারও রক্তে ভিজলো। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সাদেক মিয়া (৪২) নামে স্থানীয় এক যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন। তিনি আলোকবালী ইউনিয়নের মুরাদনগর গ্রামের বাসিন্দা এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ঘটনায় আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

নিহত যুবদল নেতার পরিচয়

নিহত সাদেক মিয়া ছিলেন ইউনিয়নের পরিচিত রাজনৈতিক কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি যুবদলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, সাদেক মিয়া স্থানীয়ভাবে বেশ প্রভাবশালী এবং কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর হত্যার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট

স্থানীয়রা জানান, আলোকবালীর চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। জমি দখল, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং স্থানীয় নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব থেকেই এই বিরোধের সূত্রপাত। গত কয়েক সপ্তাহে দফায় দফায় ছোটখাটো সংঘর্ষ হলেও সোমবার সকালে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সকালে দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডার পর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে সাদেক মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান বলে জানা গেছে।

পুলিশের বক্তব্য

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কলিমউল্লাহ জানান—
“আলোকবালীর চরাঞ্চলে দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি।”

আহতদের অবস্থা

স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুরুতর আহতদের মধ্যে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এলাকাবাসীর আতঙ্ক

আলোকবালী এলাকায় এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। বাজার, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। অনেক পরিবার নিরাপত্তার খোঁজে ঘর থেকে বের হননি।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,
“আমরা কয়েকদিন ধরে বুঝতে পারছিলাম বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। এলাকায় প্রতিদিনই দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল। অবশেষে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিল।”

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পরপরই বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যান এবং নিহত যুবদল নেতার পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগপন্থী নেতারা দাবি করেছেন যে এ সংঘর্ষ মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের ফল। রাজনৈতিকভাবে দায়ী করার সুযোগ নেই।

পূর্ববর্তী সংঘর্ষের ইতিহাস

নরসিংদীর আলোকবালী ইউনিয়ন বহুদিন ধরেই সংঘর্ষপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। চরাঞ্চলের জমি দখল, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, এবং মাদক ও চাঁদাবাজি নিয়ে প্রায়ই এখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, গত এক দশকে আলোকবালীতে অন্তত ২০টিরও বেশি বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশের কঠোর নজরদারি না থাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। তারা দাবি করেন, সংঘর্ষের আগে থেকেই এলাকায় অস্ত্রশস্ত্র জমা হচ্ছিল এবং উত্তেজনা বাড়ছিল। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে হয়তো হত্যাকাণ্ড এড়ানো যেত।

বিশ্লেষণ: কেন বাড়ছে সংঘর্ষ?

নরসিংদীর মতো এলাকা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া, সেখানে এই ধরনের সংঘর্ষ বারবার ঘটছে।
কিছু কারণ হলো—

  1. রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভক্তি।
  2. স্থানীয় আধিপত্য কায়েমে অস্ত্রের ব্যবহার।
  3. জমি দখল ও চাঁদাবাজিকে ঘিরে সংঘর্ষ।
  4. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বল উপস্থিতি।

প্রশাসনের করণীয়

বিশেষজ্ঞদের মতে, এলাকায় স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালাতে হবে।
  • দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

নিহতের পরিবারের আহাজারি

সাদেক মিয়ার পরিবার শোকে ভেঙে পড়েছে। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা কাঁদতে কাঁদতে জানান, সাদেক মিয়া কখনোই এমন মৃত্যুর যোগ্য ছিলেন না। তারা দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

নরসিংদীর আলোকবালীতে যুবদল নেতা সাদেক মিয়ার হত্যাকাণ্ড নতুন করে রাজনৈতিক সহিংসতার শঙ্কা তৈরি করেছে। এলাকাবাসী চায়, প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে স্থায়ী শান্তি ফিরিয়ে আনুক। অন্যথায়, এ ধরনের সংঘর্ষ আরও প্রাণহানি ঘটাবে এবং অস্থিতিশীলতা বাড়াবে।

MAH – 13072 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button