বানিজ্য

দৌলতদিয়ায় পদ্মার ঢাই মাছ বিক্রি হলো ৪৬ হাজার টাকায়

Advertisement

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া এলাকায় পদ্মা নদীর জলরাশিতে ধরা পড়া একটি ঢাই মাছ সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বড় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আজ সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে দৌলতদিয়ার চরকর্ণেশনার পদ্মা নদীতে জেলে কবির হলদারের জালে ধরা পড়া ১১ কেজি ওজনের ঢাই মাছ স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী ও প্রবাসীর কাছে মোট ৪৬ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মাছটি কিনেছেন খুলনার একজন সিঙ্গাপুর প্রবাসী। তিনি প্রতি কেজি ৪ হাজার ২০০ টাকায় মাছটি কিনে নেন। মাছটি দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সম্রাট শাজাহান শেখের মাধ্যমে প্রবাসীর কাছে পৌঁছে গেছে।

মাছটি স্থানীয়দের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। বিক্রির সময় নদীর তীর ধরে স্থানীয় মানুষজন মাছটি দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন।

ঢাই মাছের বিশেষত্ব ও বাজারমূল্য

শাজাহান শেখ জানান, ঢাই মাছ খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর, যার কারণে এর চাহিদা ও দাম উভয়ই বেশ বেশি। তিনি আরও জানান, গত ১১ সেপ্টেম্বর ২২ কেজির একটি ঢাই মাছ তিনি ১ লাখ ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন। আজ আবার ১১ কেজির মাছ ৪৬ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করা হলো, যা স্থানীয়দের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক সাফল্য।

ঢাই মাছ বাংলাদেশে সাধারণত পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা নদীতে পাওয়া যায়। বড় আকারের ঢাই মাছ ধরা পড়লে তা স্থানীয় জেলেদের জন্য বড় অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসে।

জেলের খুশি ও দৌলতদিয়ার অর্থনৈতিক প্রভাব

মাছ ধরা জেলে কবির হলদার বলেন, “আজকের ধরা মাছটি আমাদের পরিবারের জন্য একটি বড় উপার্জনের সুযোগ তৈরি করেছে। নদীতে মাছের উপস্থিতি জেলেদের জীবিকা নির্বাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

দৌলতদিয়ার স্থানীয়রা বলেন, “এ ধরনের বড় মাছ ধরা পড়লে আমরা আনন্দিত হই। এটি শুধু জেলেদের নয়, স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও উপকারে আসে। নদী ও মাছের প্রতি স্থানীয়দের আগ্রহ ও সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।”

পদ্মা নদী দিয়ে দৌলতদিয়া এলাকায় মাছের সরবরাহ স্থানীয় অর্থনীতি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নদী সংলগ্ন এলাকা জেলেদের জীবিকা ও স্থানীয় বাজারের অব্যাহত চাহিদার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

মাছের বাজারে প্রবাসীদের আগ্রহ

শাজাহান শেখ জানান, আজকের বিক্রয় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। খুলনার প্রবাসী প্রতিনিয়ত দৌলতদিয়ার মাছ বাজারের খবর রাখেন এবং বড় আকারের মাছ ধরা পড়লে সরাসরি ক্রয় করেন।

তিনি বলেন, “ঢাই মাছের স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কারণে প্রবাসীরা বিশেষভাবে আগ্রহী। প্রতিটি কেজি মাছের দাম কিছুটা বেশি হলেও স্বাদ ও মানের কারণে ক্রেতারা সন্তুষ্ট হন।”

পদ্মা নদীর ঢাই মাছ: একটি আকর্ষণীয় তথ্য

ঢাই মাছ বাংলাদেশের মিঠা পানির মাছের মধ্যে অন্যতম। এটি সাধারণত ৫–২০ কেজি ওজন পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। নদী ও নালা, বিল-ঝিলের পানিতে এটি সহজে পাওয়া যায়। ঢাই মাছ প্রোটিন সমৃদ্ধ, স্বাদে অতুলনীয় এবং রেস্তোরাঁ ও হোম রান্নায় সমানভাবে জনপ্রিয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বড় আকারের মাছ ধরা পড়া নদীর জলবায়ু, পরিবেশ ও খাদ্য সরবরাহের স্বাভাবিক ফলাফল। জেলেদের জন্য এটি একটি উৎসাহজনক ঘটনা।

স্থানীয় ব্যবসায়ীর মন্তব্য

মাছ ব্যবসায়ী সম্রাট শাজাহান শেখ বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত নদীর মাছ বাজার পর্যবেক্ষণ করি। ঢাই মাছ বিশেষত প্রবাসীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। আজকের মাছটি কিনে প্রবাসী খুবই খুশি হয়েছেন। এর মাধ্যমে আমাদের ব্যবসায়িক বিশ্বাস ও ব্যবসার পরিধি আরও বাড়ছে।”

তিনি আরও জানান, “ঢাই মাছ বিক্রির মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও উপার্জনের সুযোগ তৈরি হয়। এটি শুধু ব্যবসায়িক দিক থেকে নয়, স্থানীয় মানুষের মধ্যে উৎসাহ ও আনন্দও সৃষ্টি করে।”

দৌলতদিয়ার নদী ও মাছের সমৃদ্ধি

দৌলতদিয়ার পদ্মা নদী জেলেদের জীবিকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীর মাছ স্থানীয় বাজার, জেলা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরবরাহ হয়। বিশেষ করে ঢাই মাছের মতো বড় ও সুস্বাদু মাছ স্থানীয়দের জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং পর্যটক আকর্ষণ দুটোই যোগ করে।

স্থানীয়রা মনে করেন, নদীর পর্যাপ্ত পানি ও প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান থাকলে বড় মাছের সংখ্যা বাড়ে। এটি জেলেদের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে মাছের চাহিদাও বৃদ্ধি করে।

সম্রাট শাজাহানের ব্যবসায়িক কৌশল

সম্রাট শাজাহান শেখের মতে, “বাজারে ঢাই মাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় আমরা সচেতনভাবে বড় মাছ সংগ্রহ ও বিক্রি করি। প্রতিটি মাছের দাম স্থির করা হয় বাজার ও মাছের ওজন অনুযায়ী। বড় মাছ ধরা পড়লে আমরা প্রবাসী ও বড় ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করি। এটি আমাদের ব্যবসায়িক কৌশলের অংশ।”

তিনি আরও বলেন, “ঢাই মাছের স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কারণে প্রতিটি ক্রেতা সন্তুষ্ট হয়। এটি শুধু ব্যবসার দিক থেকে নয়, স্থানীয় অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলে।”

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় ১১ কেজির ঢাই মাছ বিক্রি হওয়া শুধু একটি মাছের ঘটনা নয়। এটি জেলেদের জীবিকা, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উন্নতি এবং নদী সংলগ্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি চমকপ্রদ উদাহরণ।

এ ধরনের খবর স্থানীয়দের মধ্যে আনন্দ ও উৎসাহ সৃষ্টি করে। এছাড়াও প্রবাসীরা বাংলাদেশের নদী ও মাছ বাজারের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। পদ্মা নদীর মাছের প্রাপ্যতা ও মান বজায় রাখা স্থানীয় অর্থনীতি এবং সামাজিক জীবনের জন্য অপরিহার্য।

ঢাই মাছের মতো বড় মাছ ধরা পড়া ও বিক্রির ঘটনা প্রমাণ করে, স্থানীয় নদী ও জেলেদের প্রতি যত্ন, পরিবেশের সুরক্ষা এবং ব্যবসায়িক সচেতনতা কিভাবে মিলিত হয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে পারে।

MAH – 13070 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button