রাজনীতি

ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য একটি ইসলামী দল ভারসাম্য হারিয়েছে: রিজভী

Advertisement

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন যে, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল নিজেদের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, এ দলটি স্বাধীন রাজনৈতিক সত্তা নয়, বরং বাইরের একটি দলের শাখা হিসেবে কাজ করছে। রাজধানীর রমনা কালি মন্দিরে দুর্গাপূজা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে পূজার শুভেচ্ছা

রমনা কালি মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপস্থিত হয়ে রিজভী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সমাজব্যবস্থায় ধর্মীয় উৎসবগুলো একে অপরকে কাছাকাছি নিয়ে আসে। যেকোনো সম্প্রদায়ের বড় উৎসব সময়ের সাথে সাথে জাতীয় উৎসবে রূপ নেয়। তাঁর ভাষায়, “উৎসব কখনো বিভাজন তৈরি করে না, বরং মানুষে মানুষে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে।”

ইসলামী দলের সমালোচনা

রিজভী বলেন, একটি ইসলামী দল কেবল ক্ষমতার জন্য নিজের মৌলিক অবস্থান থেকে সরে গেছে। তাদের কোনো নিজস্ব আদর্শ বা নীতি নেই। তিনি দাবি করেন, দলটি বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, বরং বাইরের শক্তির প্রভাবে কাজ করে। এ ধরনের অবস্থান দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ধর্ম ও জাতিসত্তার একাত্মতা

বিএনপির এই নেতা উল্লেখ করেন যে, ধর্ম আলাদা হলেও জাতিসত্তা সবার জন্য এক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, লালন শাহ— এরা কারো একক সম্পদ নন, বরং বাঙালির সম্মিলিত ঐতিহ্য। রিজভী বলেন, “বাংলাদেশের সৌন্দর্য এখানেই যে, সব ধর্মের মানুষ একসাথে কাজ করছে। কোনো বিভাজন এখানে স্থায়ী হতে পারে না।”

সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

রিজভী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকেও অভিযোগ তোলেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে সরকারই বিভাজনের রাজনীতি করছে। তিনি দাবি করেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদ ছড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, জনগণের ঐক্য যেকোনো ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দেবে।

অস্থিরতা তৈরির অভিযোগ

রিজভী অভিযোগ করেন যে, দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চলছে। তিনি মনে করেন, পূজার সময়কে কেন্দ্র করে উস্কানি দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়, বরং দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “দেশের এক ইঞ্চি জমিতেও যদি কেউ কু-নজর দেয়, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির কথা

বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কোনো মৌলিক বিভেদ নেই। মানুষ একে অপরের সাথে একই সংস্কৃতি ভাগাভাগি করে। তিনি উল্লেখ করেন, খাবার, পোশাক, চিন্তা— সবকিছুতেই মিল রয়েছে। এ ঐতিহ্যই যেকোনো ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে যথেষ্ট।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রিজভীর বক্তব্য সরাসরি জামায়াতে ইসলামীর প্রতি ইঙ্গিত। অতীতে জামায়াত বিএনপির সহযোগী হলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় সম্পর্কের টানাপোড়েন স্পষ্ট। বিশেষ করে নির্বাচনী রাজনীতিতে ইসলামী দলের ভূমিকা এবং তাদের বিদেশি প্রভাবের অভিযোগ নতুন করে সামনে আসছে।

ভবিষ্যৎ প্রভাব

রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বক্তব্য নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিএনপি যেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে, সেখানে একটি ইসলামী দলের ওপর তাদের কড়া সমালোচনা আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বিএনপির ভবিষ্যৎ কৌশলের অংশ হতে পারে।

রিজভীর মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একটি ইসলামী দলের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ কেবল বর্তমান পরিস্থিতিকেই নয়, ভবিষ্যতের রাজনৈতিক কৌশলকেও প্রভাবিত করতে পারে। তবে সাধারণ মানুষের জন্য বড় বার্তাটি হলো— বাংলাদেশে ধর্মীয় উৎসবগুলো এখনো বিভাজন নয়, বরং ঐক্যের প্রতীক।

এম আর এম – ১৫৪৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button