বিশ্ব

ইরানের গুপ্তচরবৃত্তি চেষ্টা: ইসরায়েলি নাগরিককে নিয়োগের চেষ্টা

Advertisement

ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা ইসরায়েলের নাগরিকদের ফোন কলের মাধ্যমে নিয়োগের চেষ্টা চালিয়েছে, সতর্ক করেছে ইসরায়েল পুলিশ। ফোন কলগুলোতে প্রলোভনমূলক বেতন ও নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তাব ছিল।

ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা শতাধিক ইসরায়েলি নাগরিককে নিয়োগের চেষ্টা করেছে। স্থানীয় সময় শনিবার, ইসরায়েল পুলিশ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। অভিযোগ অনুসারে, ইরানি গোয়েন্দারা ফোন কলের মাধ্যমে ইসরায়েলিদের প্রলোভন দেখিয়েছেন এবং ‘প্রতিযোগিতামূলক বেতন’ ও ‘পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা’ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন।

ফোন কলের বিবরণ ও প্রমাণ

ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট সম্প্রতি ফোন কলের একটি রেকর্ডিং প্রকাশ করেছে। রেকর্ডিংয়ে শোনা যায় একটি রোবোটিক কণ্ঠস্বর যা বলছে, “ইরানি গোয়েন্দা যোগ্য এজেন্ট খুঁজছে।” ফোন কলের মাধ্যমে নাগরিকদের বলা হয়েছে যে, তারা ইরানের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারবে এবং তার বিনিময়ে উচ্চ বেতন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

ইসরায়েল পুলিশ মনে করছে, এই ফোন কলগুলো ‘যুদ্ধকালীন সময়ে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য’ নিয়ে করা হয়েছে।

গত বছরের প্রেক্ষাপট

গত বছর, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে নজিরবিহীন সংখ্যক ইসরায়েলি নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ মুখপাত্র ডিন এলসডুন বলেন, “হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর এবং গাজার সঙ্গে সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ইরানের সঙ্গে সম্পর্কিত ২৫টিরও বেশি গুপ্তচরবৃত্তির মামলা তদন্ত করেছি। এর ফলে প্রায় ৪৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

এ ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হচ্ছে, ইরানের গুপ্তচরবৃত্তি কার্যক্রম শুধুমাত্র সীমান্তের বাইরে নয়, ভেতরে থেকেও ইসরায়েলের নাগরিকদেরকে টার্গেট করছে।

ইরানের গোয়েন্দা সংস্থার লক্ষ্য

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের লক্ষ্য শুধুমাত্র তথ্য সংগ্রহ নয়, বরং ইসরায়েলের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করা। তারা ইসরায়েলি নাগরিকদের কাছে প্রলোভনমূলক প্রস্তাব দিচ্ছে যাতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং কৌশলগত গোপনীয়তা সংগ্রহ করা যায়।

ইরানের আগের কর্মকাণ্ড অনুযায়ী, তারা প্রায়ই রোবোটিক ভয়েস, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং গোপন চ্যানেলের মাধ্যমে এ ধরনের অভিযান চালায়। এতে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় এবং সরকারের প্রতি আস্থা কমে যায়।

ইসরায়েল পুলিশের সতর্কতা

ইসরায়েল পুলিশ জনসাধারণকে সচেতন থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, কেউ যদি এমন ফোন কল বা প্রলোভনমূলক প্রস্তাব পান, তা অবশ্যই উপেক্ষা করতে হবে এবং অবিলম্বে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে জানান।

পুলিশ বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে যে, যেসব ব্যক্তি অনৈতিক প্রস্তাবে জড়িত হয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক বছরের পর বছর ধরে উত্তপ্ত। ইরান প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন তত্ত্ব এবং প্রতিকূল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মসাদও অনেকবার ইরানের গুপ্তচরবৃত্তি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের লক্ষ্য ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক গোপনীয়তা অর্জন করা। এছাড়াও, এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থাকে আরও জটিল করছে।

সামাজিক ও নিরাপত্তা প্রভাব

এ ধরনের ফোন কল এবং প্রলোভনমূলক প্রস্তাব সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। বিশেষত যারা প্রযুক্তি বা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সঙ্গে যুক্ত, তারা আরও বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা একমাত্র পথ।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

গোপন তথ্য ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান প্রায়শই বিদেশে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাইছে। তারা মোবাইল ফোন, ইমেল এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রস্তাব দেয়, যা নাগরিকদের কাছে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের প্রস্তাবে জড়ানো ব্যক্তি শুধুমাত্র নিজের নয়, দেশের সুরক্ষা ঝুঁকিতে ফেলতে পারেন।

ইসরায়েল সরকারের পদক্ষেপ

ইসরায়েল সরকার ইতিমধ্যেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে:

  1. সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি: জনগণকে অবগত করা।
  2. আইনগত ব্যবস্থা: যারা গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা।
  3. নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা: গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা বাড়ানো।
  4. আন্তর্জাতিক সমন্বয়: অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা।

ইরানের গুপ্তচরবৃত্তি চেষ্টা প্রমাণ করছে, আধুনিক যুদ্ধ কেবল সামরিক বাহিনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি তথ্য যুদ্ধ, মানসিক প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতার একটি অংশ। ইসরায়েল পুলিশ এবং সরকার জনসাধারণকে সচেতন রাখার চেষ্টা করছে, যাতে কেউ সহজেই এই ধরনের প্রলোভন বা ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার শিকার না হয়।

এ ঘটনাটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মনে করিয়ে দেয় যে, তথ্য নিরাপত্তা এবং নাগরিক সচেতনতা এখন সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

MAH – 13046 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button