বিশ্ব

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে রাষ্ট্রদূতদের দেশে ফেরার নির্দেশ ইরানের

Advertisement

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সিদ্ধান্তের জবাবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতদের দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে তেহরান। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভোট ও ব্যর্থ প্রস্তাব

শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে চীন ও রাশিয়ার যৌথ প্রস্তাব গৃহীত না হওয়ায় ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পথ সুগম হয়। ওই প্রস্তাবে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছয় মাস স্থগিত রাখার আহ্বান জানানো হলেও মাত্র চারটি ভোটে সমর্থন পায়, বিপক্ষে পড়ে নয়টি ভোট। দুই দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। ফলে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় ভোর ছয়টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় কী থাকছে

জাতিসংঘের এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ইরানের পারমাণবিক, সামরিক, ব্যাংকিং ও নৌপরিবহন খাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। এরই মধ্যে বৈশ্বিক বাজারে ইরানি মুদ্রা রিয়াল বড় ধরনের দরপতনের মুখে পড়েছে। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে দেশটির অর্থনীতি আরও চাপে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

ইউরোপীয় দেশগুলোর অভিযোগ

ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের অভিযোগ, ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে ইরান। ওই চুক্তির মাধ্যমে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে বিরত রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তেহরান গোপনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে গেছে, যা চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন।

ইরানের প্রতিক্রিয়া

ইরান বলছে, পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং এটি একতরফা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত। তেহরানের মতে, ইউরোপীয় দেশগুলো “দায়িত্বজ্ঞানহীন পদক্ষেপ” নিয়েছে, যা পারমাণবিক চুক্তির মূল চেতনার পরিপন্থী। এ কারণেই লন্ডন, প্যারিস ও বার্লিনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের আলোচনার জন্য তেহরানে ডেকে আনা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার ভূমিকা

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সম্প্রতি ইরানের কয়েকটি স্থাপনা পরিদর্শনের কথা জানিয়েছে। তবে দেশটির ভেতরে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোতে পরিদর্শন হয়েছে কিনা সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু জানায়নি তারা। ইরানের পারমাণবিক প্রধান মোহাম্মদ এসলামি এ অবস্থাকে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “আমাদের স্থাপনায় আক্রমণ হয়েছে অথচ আইএইএ একটি নিন্দা পর্যন্ত জানায়নি।”

রাশিয়া ও চীনের অবস্থান

রাশিয়া ও চীন শুরু থেকেই ইরানের পাশে থেকেছে। তারা মনে করে, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হলে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়বে। তবে নিরাপত্তা পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থানকে সমর্থন করায় তাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ফলে কূটনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি

এই কূটনৈতিক টানাপোড়েন ইরানের অর্থনীতি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা উভয়ের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের অশান্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন এই উত্তেজনা তেলের বাজারকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ইরান রাষ্ট্রদূতদের দেশে ফিরিয়ে এনে আলোচনার পথ খোলা রাখলেও অনেকেই মনে করছেন, এ পদক্ষেপ মূলত পশ্চিমাদের প্রতি কড়া বার্তা পাঠানোর কৌশল।

ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের এই বিরোধ সাময়িক নাকি দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতত স্পষ্ট হচ্ছে যে, পারমাণবিক চুক্তি ও নিষেধাজ্ঞাকে ঘিরে ইরান নতুন এক কূটনৈতিক লড়াইয়ে নামছে। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, এই পরিস্থিতি কি নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ডেকে আনবে, নাকি আলোচনার টেবিলে সমাধান খোঁজা হবে?

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button