
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে টানা চারদিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ঢাকার ব্যস্ত শহর থেকে দেশজুড়ে মানুষ বের হয়ে যাবেন বাড়ি, গ্রাম কিংবা পর্যটন স্থানে। এই উৎসবমুখর ছুটিতে মোটরসাইকেলে যাত্রা করবেন হাজার হাজার বাইকার। কেউ নিজ বাড়ি ফিরবেন, কেউ আবার পাহাড়, সমুদ্র বা অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র ঘুরতে যাবেন।
তবে দীর্ঘ যাত্রার আনন্দে অনেক সময় কিছু সাধারণ ভুল হয়ে যায়, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই এই ছুটিতে বাইক নিয়ে রাইডের আগে কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।
১. গতি নিয়ন্ত্রণে অবহেলা
মোটরসাইকেল চালকের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ভুল হলো দ্রুত গতি। বিশেষ করে উৎসবকেন্দ্রিক যাত্রায় রোমাঞ্চ বা ব্যস্ত সময়সূচির কারণে হাইওয়েতে অনিয়ন্ত্রিত গতিতে বাইক চালানো হয়।
পরামর্শ:
- সর্বদা স্পিড লিমিট মেনে চলুন।
- রাস্তার অবস্থা অনুযায়ী গতি নিয়ন্ত্রণ করুন।
- বড় গাড়ি বা ট্রাকের পাশে দ্রুত চলবেন না।
- পুলিশের টহল এবং হাইওয়ে স্পিড চেকে সহযোগিতা করুন।
উৎসবের সময়ে পুলিশ বিশেষ নজরদারি রাখে, তাই আইন মেনে চললে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক কমে।
২. হেলমেট ও সুরক্ষা সরঞ্জামের অভাব
অনেক বাইকার হেলমেট ছাড়া রাইড করতে ভয় পান না। কিন্তু এটি সবচেয়ে বড় ভুল। হেলমেট ছাড়া দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মাথায় গুরুতর আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে।
পরামর্শ:
- সার্টিফায়েড হেলমেট ব্যবহার করুন।
- বাইকের জন্য গ্লাভস, বুট, জ্যাকেট, ইলবো ও নিওপ্রীন প্যাড ব্যবহার করুন।
- রাতে বা কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় রিফ্লেকটিভ জ্যাকেট পরুন।
এই সরঞ্জামগুলো শরীরের ক্ষতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৩. বড় গাড়ি ও ট্রাকের চাপের সময় লেন পরিবর্তন করা
হাইওয়েতে বড় ট্রাক বা বাসের পাশ দিয়ে হঠাৎ লেন পরিবর্তন করা বিপজ্জনক। অনেক দুর্ঘটনা এই কারণে ঘটে।
পরামর্শ:
- নিজের লেনে স্থির থাকুন।
- বড় গাড়ির চাপের সময়ে সাইড মিরর ব্যবহার করুন।
- রাইড করার সময় সামনে ও পাশে যানবাহনের অবস্থান সচেতনভাবে দেখুন।
৪. যাত্রার আগে বাইকের চেকআপ না করা
লম্বা যাত্রার আগে বাইক চেক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় ছোটখাটো ত্রুটি বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পরীক্ষা করুন:
- ব্রেক, টায়ার প্রেসার ও টায়ারের অবস্থা
- হেডলাইট, টেললাইট ও ইন্ডিকেটর
- ইঞ্জিন তেল, চেইন লুব্রিকেশন
- স্পেয়ার ফিউজ ও প্রয়োজনীয় টুলস
সঠিক প্রস্তুতি নিলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক কমে।
৫. বিশ্রামের অভাব
লম্বা পথ চালানো শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত করে। একটানা চালালে মনোযোগ কমে যায় এবং দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
পরামর্শ:
- প্রতি ১–২ ঘণ্টা অন্তর বিরতি নিন।
- পানি পান করুন, হাইড্রেটেড থাকুন।
- প্রয়োজনে হালকা খাবার ও স্যালাইন নিন।
- বিশ্রামের পরই আবার যাত্রা শুরু করুন, হঠাৎ গতি বাড়াবেন না।
৬. অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন
অনেকে যাত্রা শুরু করার আগে অতিরিক্ত ব্যাগ প্যাক করেন বা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করেন। এটি বাইকের ভারসাম্য ও নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে।
পরামর্শ:
- যতটা সম্ভব হালকা মালামাল নিয়ে যাত্রা করুন।
- শিশু বা নারী যাত্রী থাকলে বিশেষ সতর্কতা নিন।
- লম্বা যাত্রার সময় অতিরিক্ত ভার এড়িয়ে চলুন।
৭. আবহাওয়ার খবর না নেওয়া
রাইডের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা জরুরি। বিশেষ করে বর্ষা বা কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে।
পরামর্শ:
- রেইনকোট বা জলরোধী জ্যাকেট সঙ্গে রাখুন।
- বৃষ্টির সময়ে গতি কমিয়ে নিরাপদে চলুন।
- আবহাওয়ার হালচাল দেখে রুট পরিকল্পনা করুন।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা
- সিগনাল ও লাইট ব্যবহার: লেন পরিবর্তন, বাঁক বা ট্রাফিকে প্রবেশের আগে সিগনাল ব্যবহার করুন।
- ফোন ব্যবহার না করা: চলার সময় ফোনে কথা বা মেসেজ করা বিপজ্জনক। হ্যান্ডস-ফ্রি ব্যবহার করুন বা বিরতিতে ফোন চেক করুন।
- শিশুদের সুরক্ষা: শিশু যাত্রী থাকলে বাচ্চাদের জন্য স্পেশাল হেলমেট ব্যবহার করুন।
- নিরাপদ পার্কিং: দুর্গাপূজার বাজার বা পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বাইক নিরাপদ স্থানে রাখুন।
ছুটি ভ্রমণের সময় বাইকের জন্য জরুরি প্রস্তুতি
- ফুল ট্যাংক: লম্বা যাত্রার আগে পুরো ট্যাংক ভরে নিন।
- স্পেয়ার পার্টস: টায়ার প্যাঞ্চার বা হালকা টুলস সঙ্গে রাখুন।
- ফাস্ট ফুড ও পানি: দীর্ঘ রাস্তার জন্য হালকা খাবার ও পানি সঙ্গে রাখুন।
- রোড সেফটি অ্যাপ: রুটের ট্রাফিক ও আবহাওয়ার জন্য মোবাইলে সেফটি অ্যাপ ব্যবহার করুন।
দুর্গাপূজা বা অন্য কোনো দীর্ঘ ছুটিতে বাইক যাত্রা আনন্দদায়ক হতে পারে, তবে সতর্কতা ছাড়া তা বিপদসীমার মধ্যে চলে যেতে পারে। হেলমেট, সেফটি গিয়ার, যথাযথ চেকআপ, লেন ও গতি নিয়ন্ত্রণ, বিশ্রাম, আবহাওয়ার পূর্বাভাস—এই সব বিষয় মেনে চললে যাত্রা হবে নিরাপদ ও আনন্দময়।
MAH – 13027 I Signalbd.com