বানিজ্য

দুর্গাপূজার কারণে ভোমরা স্থলবন্দরে ৬ দিনের জন্য আমদানি-রফতানি বন্ধ

Advertisement

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর আগামী ছয় দিন আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে এই সময়ে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের মাধ্যমে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হবে।

আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) পর্যন্ত সরকারি ছুটি এবং পূজার প্রভাবে সকল বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

ভোমরা কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা সত্যজি দেওয়ান সংবাদমাধ্যমকে জানান, “দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এই সময়ে সরকারি ছুটি থাকায় শুক্রবার (৪ অক্টোবর) থেকে পুনরায় কার্যক্রম শুরু হবে। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পূজার বাকি দিনগুলোতেও বন্দরের কার্যক্রম সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

সীমান্ত বাণিজ্যে প্রভাব

ভোমরা স্থলবন্দর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবন্দর। এখানে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রতি দিন বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি ও রফতানি হয়। বন্দরের দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রমে সাময়িক প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্য, কাঁচামাল, কৃষিপণ্য ও প্রস্তুত পণ্যের সরবরাহ চেইনে কিছু বিলম্ব দেখা দিতে পারে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, “দীর্ঘ ছয় দিন বন্দর বন্ধ থাকলে আমাদের পণ্য সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তবে আমরা পূজার আনন্দ ও উৎসবের কারণে এটি মেনে নিচ্ছি। আশা করছি দ্রুত কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে।”

যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে

ভোমরা বন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, যদিও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, তবে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
এটি অনেক ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও পরিবারের জন্য সুখবর। যাত্রীরা সহজেই সীমান্ত পারাপার করতে পারবেন এবং পূজার জন্য বাড়ি ফিরে যেতে কোনো সমস্যার মুখে পড়বেন না।

দুর্গাপূজার গুরুত্ব এবং ব্যবসায়িক প্রভাব

বাংলাদেশে শারদীয় দুর্গাপূজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এটি সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হয়। পূজার আগে ও চলাকালীন সময়ে দেশজুড়ে দোকান, বাজার, কারখানা এবং সীমান্তবন্দরগুলোতে ব্যস্ততা বৃদ্ধি পায়। ভোমরা বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর বন্ধ থাকলে সীমান্ত বাণিজ্যে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, “সীমান্ত বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে পূজার ছুটি রাখা একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত। এটি ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনা করতে সাহায্য করবে এবং ভোমরা বন্দরের সুষ্ঠু পরিচালনাও নিশ্চিত করবে।”

ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি

ভোমরা বন্দরের দুইপক্ষীয় ব্যবসায়ীরা পূজার আগে নিজেরা পণ্য মজুদ ও সরবরাহ পরিকল্পনা করেছেন। পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবসায়ীরা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন যাতে পূজার সময় বাজারে কোন ধরনের পণ্য ঘাটতি না হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী অরূপ ঘোষ বলেন, “আমরা পূজা উপলক্ষে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছি। আগে থেকেই আমাদের প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করেছি। তাই পূজার ছয় দিনে আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম প্রায় স্বাভাবিকভাবে চলবে।”

ভোমরা বন্দরের প্রাকৃতিক ও সামাজিক গুরুত্ব

ভোমরা স্থলবন্দর কেবল বাণিজ্যিক কারণে নয়, সামাজিক কারণে ও গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এই বন্দরের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, পর্যটক ও পরিবারপ্রীতি যাত্রীরা সীমান্ত পারাপার করে। তাই পূজার সময় যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রাখার পদক্ষেপ অনেকের কাছে স্বস্তিদায়ক।

বন্দর সচিব জানান, “আমরা চেষ্টা করেছি বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রাখলেও যাত্রীদের কোনো অসুবিধা না হয়। পাসপোর্টচালিত যাত্রীদের জন্য সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সীমান্ত পারাপার খোলা থাকবে।”

সরকারের ছুটি ও কার্যক্রম সময়সূচি

ভোমরা বন্দরের সরকারি ছুটির সময়সূচি নিম্নরূপ:

  • ২৮ সেপ্টেম্বর (রোববার) – দুর্গাপূজা উপলক্ষে বন্দর বন্ধ
  • ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর – পূজার ছুটি ও সীমিত কার্যক্রম
  • ১ ও ২ অক্টোবর – সরকারি ছুটি
  • ৪ অক্টোবর (শুক্রবার) – সপ্তাহিক ছুটি
  • ৫ অক্টোবর থেকে পুনরায় সাধারণ কার্যক্রম শুরু

বন্দর কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই সময়সূচি মানলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও যাত্রী চলাচলে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না।

ব্যবসায়ীদের সুপারিশ

বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা সকলকে সুপারিশ করেছেন, পূজার ছয় দিনে পণ্য সরবরাহ, ভ্রাম্যমাণ ট্রাক এবং কাস্টমস কাগজপত্র আগে থেকে সম্পন্ন করতে। এতে করে বন্দর বন্ধ থাকলেও বড় ধরনের ব্যবসায়িক সমস্যা দেখা দেবে না।

সামগ্রিক পরিস্থিতি

ভোমরা স্থলবন্দর দুর্গাপূজার ছয় দিনে আমদানি-রফতানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও ব্যবসায়িক ও সামাজিক ব্যালান্স বজায় রাখা হয়েছে। যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকায় দেশের সাধারণ মানুষও ছুটির আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।

সারসংক্ষেপে বলা যায়, ভোমরা বন্দরের এই সময়সূচি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও পূজার উৎসবকে সমন্বিত করার একটি কার্যকর পদক্ষেপ।

MAH – 13025 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button