বিশ্ব

জাতিসংঘে তিন ‘নাশকতার’ শিকার ট্রাম্প, চান তদন্ত

Advertisement

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিতে গিয়ে একের পর এক বিব্রতকর ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলমান সিঁড়ির বিভ্রাট থেকে শুরু করে টেলিপ্রম্পটার কাজ না করা এবং সাউন্ড সিস্টেম বিকল হয়ে যাওয়া—মোট তিনটি ঘটনায় তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প এগুলোকে “পরিকল্পিত নাশকতা” বলে দাবি করে জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে তদন্ত দাবি করেছেন।

এসকেলেটর বিভ্রাট: অল্পের জন্য রক্ষা

জাতিসংঘ সদর দপ্তর সাধারণ অধিবেশনে প্রবেশের সময় ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প চলমান সিঁড়ি ব্যবহার করছিলেন। হঠাৎ সেটি আটকে গেলে তারা সামান্যর জন্য দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান। ট্রাম্প পরে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, এটি নিছক কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়, বরং “পরিকল্পিতভাবে করা নাশকতা”। তার দাবি, এ ঘটনায় জাতিসংঘ কর্মীদের গাফিলতি বা ইচ্ছাকৃত ভূমিকা থাকতে পারে।

টেলিপ্রম্পটার বিকল: বক্তৃতায় বিঘ্ন

বক্তৃতা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই টেলিপ্রম্পটার কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে ট্রাম্প নিজের প্রস্তুত বক্তৃতা চালিয়ে যেতে সমস্যায় পড়েন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নিজের মতো করে বক্তব্য অব্যাহত রাখলেও পরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যিনি এই যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছিলেন তিনি বড় বিপদে আছেন।” তার দাবি, ১৫ মিনিটের বিলম্বে বক্তৃতার মূল বক্তব্য দৃশ্যমান হচ্ছিল। তবে পরিস্থিতি সামলে নিয়ে তিনি নিজের বক্তব্য শেষ করেন এবং দাবি করেন, শ্রোতারা এতে মুগ্ধ হয়েছেন।

তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে সাউন্ড সিস্টেমকে ঘিরে। ট্রাম্পের বক্তব্য শুনতে অনেক রাষ্ট্রপ্রধানই সমস্যায় পড়েন। এমনকি স্ত্রী মেলানিয়া পরে তাকে বলেন, তিনি বক্তৃতার বেশিরভাগ শব্দই স্পষ্টভাবে শুনতে পাননি। ট্রাম্প এই ঘটনাকে কোনো কাকতালীয় বিপর্যয় নয়, বরং একটি ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘকে চিঠি ও তদন্ত দাবি

এই তিনটি ঘটনায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে একটি চিঠি পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সেখানে তিনি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন। পাশাপাশি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

জাতিসংঘের পক্ষের ব্যাখ্যা

জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক অবশ্য এসকেলেটর ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার দাবি, একজন ফটোগ্রাফার নিরাপত্তাজনিত কারণে সামনে চলে আসায় ‘সেফটি প্রোটোকল’ অনুযায়ী সিঁড়িটি থেমে যায়। তবে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন ট্রাম্প বা হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

পেছনের প্রেক্ষাপট

ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবন নানা বিতর্কে ভরপুর। হোয়াইট হাউসে থাকার সময়ও তিনি সংবাদমাধ্যম, প্রযুক্তি বা আন্তর্জাতিক সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিকবার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। এবার জাতিসংঘ মঞ্চে এমন অভিজ্ঞতা তাকে আরও ক্ষুব্ধ করেছে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এটি শুধু একটি দুর্ঘটনার ধারাবাহিকতা হলেও ট্রাম্প রাজনৈতিকভাবে এটিকে বড় ইস্যুতে রূপ দিতে চাইছেন।

সম্ভাব্য প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এমন ঘটনা শুধু প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা নাকি আসলেই ষড়যন্ত্র—তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সমর্থকরা ট্রাম্পের সঙ্গে একমত হয়ে ঘটনাটিকে গুরুতর নাশকতা হিসেবে দেখছেন। অপরদিকে সমালোচকরা বলছেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টিকে বাড়িয়ে তুলছেন। এই বিতর্কে জাতিসংঘ প্রশাসনও কিছুটা চাপে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনায় দুই ধরনের প্রভাব থাকতে পারে। প্রথমত, জাতিসংঘের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প যদি রাজনৈতিকভাবে এটিকে প্রচারে ব্যবহার করেন, তবে তা তার সমর্থক ঘাঁটি আরও শক্তিশালী করবে। তবে বাস্তব তদন্তে নাশকতার কোনো প্রমাণ না মিললে বিষয়টি আবার তার জন্যই বিব্রতকর হতে পারে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই তিনটি অভিজ্ঞতা এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তদন্ত শুরু হলে আসল সত্য সামনে আসবে কি না, তা নিয়েই কৌতূহল। তবে ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনে বিতর্ক যে কখনোই কমছে না, এ ঘটনা আবারও তার প্রমাণ।

এম আর এম – ১৫১২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button