
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ইতিহাস এখনও বাংলাদেশকে খুব একটা স্বস্তি দেয়নি। দুই দলের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের ১৭টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতেই বাংলাদেশের জয়, বাকি ১৬ ম্যাচই জয়ী হয়েছে ভারত। ২০১৯ সালের দিল্লির সেই বিজয়ী ম্যাচের পর থেকে বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে একটিও জয় খুঁজে পাননি। তবুও, এই বিরাট ব্যবধান এবং পরিসংখ্যানের ভিন্নতায় ভর করে ক্রিকেটপ্রেমীদের উত্তেজনা ও আগ্রহ আজও একই রকম উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে দিচ্ছে।
আজ (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৮টা ৩০ মিনিটে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়া কাপ ২০২৫-এর সুপার ফোরের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, যেখানে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে এবারের টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট ভারত। বাংলাদেশ দল ইতোমধ্যে সুপার ফোরে দারুণ শুরু করেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের মাধ্যমে। তাই, এই ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় পরীক্ষা এবং ভারতের বিরুদ্ধে জয়ের সুযোগের দিন।
ভারত বনাম বাংলাদেশ: বর্তমান ফর্ম এবং চ্যালেঞ্জ
ভারত দল টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দল। শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট এবং বল হাতে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স ভারতের প্রধান শক্তি। বিশেষ করে শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতীয় ওপেনাররা যে ঝড়ো ব্যাটিং করেছে, তা বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
জাসপ্রিত বুমরাহ, কুলদ্বীপ যাদব এবং বরুণ চক্রবর্তীর মতো অভিজ্ঞ বোলাররা দারুণ ফর্মে আছেন। তাই বাংলাদেশের ব্যাটারদের রানের জন্য প্রতিটি বলের খেলা অত্যন্ত সচেতনভাবে করতে হবে। ওপেনার তানজিদ তামিম এবং সাইফ হাসানকে সঙ্গে রাখতে হবে লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়কে, যারা দলের মাধ্যস্তরকে শক্তিশালী করতে পারেন।
বাংলাদেশের কৌশল: জয়ের জন্য প্রস্তুতি
বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্স আশা প্রকাশ করেছেন যে দল আত্মবিশ্বাসী এবং জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ একরকম দাপট দেখিয়েছে। সেই ম্যাচে ব্যাট ও বল, দুই দিকেই শক্তিশালী প্রদর্শন করেছে লাল-সবুজরা।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশে হতে পারে দুইটি পরিবর্তন। শেষ ম্যাচে ভাল পারফরম্যান্স না করা শরিফুল ইসলাম একাদশ থেকে বাদ পড়তে পারেন। তার জায়গায় তানজিম হাসান সাকিব সুযোগ পেতে পারেন, যিনি বল হাতে দক্ষতা দেখানোর পাশাপাশি ব্যাটে শেষ মুহূর্তে ঝড়ো ইনিংস খেলার ক্ষমতাও রাখেন।
অন্যদিকে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে একাদশে স্থান দেওয়া হতে পারে। তবে, টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো একটি বড় ঝুঁকি নিতে চাইবে না এবং এই ক্ষেত্রে তানজিম সাকিবকে খেলানো হতে পারে। একাদশে পারভেজ হোসেন ইমনের সুযোগ প্রায় শূন্যে, বিশেষ করে সাইফ হাসানের দুর্দান্ত ওপেনিং পারফরম্যান্সের কারণে।
ব্যাটিং লাইনআপের চ্যালেঞ্জ
ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিং লাইনআপ পরিচালনা বাংলাদেশের জন্য বড় পরীক্ষা হবে। অভিষেক শর্মা, শুভমান গিল এবং সাঞ্জু স্যামসনরা বড় ইনিংস খেলতে সক্ষম। তাই বাংলাদেশের ব্যাটারদের প্রতিটি বল অত্যন্ত সংযমের সঙ্গে খেলা প্রয়োজন।
তানজিদ তামিম ও সাইফ হাসান ওপেনিংয়ে থাকবেন। লিটন দাস এবং তাওহিদ হৃদয় মিডল অর্ডারে দলের দায়িত্ব ভাগাভাগি করবেন। পুরো দলকে বুঝে খেলে এবং ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে হবে।
বোলিং ইউনিট: ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ থামানো মিশন
বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণে মোস্তাফিজুর রহমান, শেখ মাহেদি, নাসুম আহমেদ এবং তাসকিন আহমেদ রয়েছেন। এই পেসার এবং স্পিনারদের কাজ হবে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে থামানো।
মোস্তাফিজুর রহমানের অভিজ্ঞতা, শেখ মাহেদি ও নাসুমের সঠিক লাইন-লেন্থ এবং তাসকিন আহমেদের স্পিড ভারতের ব্যাটারদের জন্য বড় চাপ তৈরি করতে পারে। দারুণ ফর্মে থাকা ভারতের ওপেনারদের বিরুদ্ধে দ্রুত উইকেট নেওয়াই মূল চ্যালেঞ্জ।
উইকেট ও কন্ডিশন
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে উইকেট সম্পর্কে ইতিমধ্যেই ভালো ধারণা হয়েছে। উইকেট স্পিন ও পেস উভয় ধরণের বোলিংকে সমর্থন করছে। সুপার ফোরের এই ম্যাচে বাংলাদেশ নিজেদের কৌশল ও পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠে নামবে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ের পর দল আত্মবিশ্বাসী। ব্যাটিং-সহ বোলিং, ফিল্ডিং সব ক্ষেত্রেই প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। ম্যাচের শুরু থেকেই দল জয়ের জন্য মনোবল বজায় রাখবে।
বাংলাদেশের জয়ের কৌশল
১. সংযমী ব্যাটিং: ভারতের পেস ও স্পিনারদের মোকাবিলায় প্রতিটি ব্যাটিং শটে সংযম ও ধৈর্য প্রয়োজন।
২. উইকেট নেওয়া: প্রথম ৬-৭ ওভার এবং মিডল অর্ডারে দ্রুত উইকেট নেওয়াই মূল লক্ষ্য।
৩. ফিল্ডিং শক্তিশালী করা: ভারতীয় ব্যাটারদের জন্য চাপ তৈরি করতে ফিল্ডিং অপরিহার্য।
৪. উপযুক্ত একাদশ নির্বাচন: শেষ ম্যাচের পারফরম্যান্স অনুযায়ী একাদশে পরিবর্তন।
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি শুধুমাত্র দুই দলের মধ্যকার লড়াই নয়, এটি ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য এক উত্তেজনার উৎস। পরিসংখ্যান ভারতীয় জয়ের কথা বললেও, বর্তমান ফর্ম, আত্মবিশ্বাস এবং সুপার ফোরে শুরু করা জয়ের ধারা বাংলাদেশকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখছে।
আজকের ম্যাচে লাল-সবুজরা যদি নিজেদের সামর্থ্য প্রমাণ করতে পারে, তবে ভারতীয় জয় শূন্যে রাখা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি জয় যুক্ত করা সম্ভব। বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীরা আজকের এই ম্যাচকে নিয়েই মুখরিত।
MAH – 12987 I Signalbd.com