অর্থনীতি

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা চাইলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

Advertisement

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের উদ্যোগে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক সময় দুপুরে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গারের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষ সহযোগিতা কামনা করেন।

বৈঠকের পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে এই উদ্যোগে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ ও সহায়তা চাইবেন, যারা বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক পাচার ও অর্থ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞ।”

শফিকুল আলম আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে জোর দিয়েছেন যে, শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। এই অর্থ ফিরিয়ে আনা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম বড় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় এ বিষয়টি আরও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।”

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের নতুন উদ্যোগ

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ উদ্যোগ শুধু পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বৈঠকে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছেন। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সবুজ জ্বালানি ব্যবস্থাপনা

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ এই সমস্ত ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারবে, যা দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করবে।

শফিকুল আলম বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ ও পরিচালনায় অভিজ্ঞ। তারা বাংলাদেশকে অর্থ পাচার রোধ, পুনরুদ্ধার এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে প্রস্তুত।”

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ও অন্যান্য বৈঠক

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ডব্লিউটিও (WTO) মহাপরিচালক ডক্টর এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলার সঙ্গেও বৈঠক করেছে। বৈঠকে বাংলাদেশের রফতানি সুবিধা, তৈরি পোশাক খাতের বাজার সম্প্রসারণ, উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাণিজ্য বৈষম্য হ্রাসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিশেষভাবে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় ডব্লিউটিও’র সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই LDC থেকে উত্তরণের দিকে এগোচ্ছে, এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় আরও সমান সুযোগ পেতে বিশ্ব সংস্থার সহায়তা অপরিহার্য।”

নেদারল্যান্ডসের রাণী দ্বিতীয় ম‍্যাক্সিমার সঙ্গেও বৈঠক

এদিন প্রধান উপদেষ্টা নেদারল্যান্ডসের রাণী দ্বিতীয় ম‍্যাক্সিমার সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠকে আলোচনা হয় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সবুজ জ্বালানি ব্যবস্থাপনা

ড. ইউনূস বৈঠকে উল্লেখ করেছেন যে, দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সুবিধা সম্প্রসারণ করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন। বিশেষত, নারী উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং স্থানীয় ব্যবসায়িক পরিবেশ শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এ ধরনের সমন্বিত সহযোগিতা অত্যন্ত কার্যকর হবে।

পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ও প্রভাব

বিশ্ব ব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হওয়ার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। বিশেষত, শেখ হাসিনার শাসনামলে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।

এই অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংক এবং কর্পোরেট চ্যানেলের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছে। অর্থ পাচারের ফলে দেশের অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে, সরকারি আয় হ্রাস পাচ্ছে এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো প্রভাবিত হচ্ছে

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশের জনগণের কল্যাণ, সামাজিক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান নিশ্চিত করবে।”

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব

ড. ইউনূসের মতে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পাচার রোধের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। তিনি বিশেষভাবে বিশ্ব ব্যাংক ও ডব্লিউটিওর সহায়তা উল্লেখ করেছেন।

বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞরা অর্থের উৎস শনাক্তকরণ, সম্পদের স্থিতিশীলীকরণ এবং পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে সক্ষম। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি ও উদ্ভাবনী আর্থিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও শক্তি বৃদ্ধি করা সম্ভব।

শফিকুল আলম বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থায়ী সহযোগিতা দেশের জন্য নতুন বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি প্রবাহের সুযোগ তৈরি করবে। এটি দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্যও সহায়ক হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক বৈঠকে বাংলাদেশকে নতুন অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ও সহায়তা চেয়েছেন। বিশেষত, অবৈধভাবে পাচার হওয়া ২৩৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ পুনরুদ্ধার, ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও সবুজ জ্বালানি উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা চাইছেন তিনি।

বাংলাদেশের জন্য এই ধরনের উদ্যোগ অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা, সামাজিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা এবং স্থিতিশীলতার পথে একটি বড় ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক ও ডব্লিউটিওর সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হলে দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ আরও সুদৃঢ় ও স্বনির্ভর হবে। এই বৈঠকগুলো বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

MAH – 12985 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button