
সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি, কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলার্সের প্রধান এবং মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদ শেখ আবদুল আজিজ আল-শেখ ইন্তেকাল করেছেন। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সৌদি রাজধানী রিয়াদে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
তার ইন্তেকালে শুধু সৌদি আরবই নয়, পুরো মুসলিম উম্মাহ গভীর শোকাহত। নানা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, ধর্মীয় নেতা ও আলেমরা একে ইসলামি বিশ্বে অপরিসীম ক্ষতি হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের শোকবার্তা
বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস শোকবার্তা প্রদান করে বলেছেন—
“শেখ আবদুল আজিজ আল-শেখের ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহ এক মহৎ আলেম, এক প্রজ্ঞাবান চিন্তাবিদ এবং ইসলামি শরিয়াহর এক দিকনির্দেশক কণ্ঠস্বরকে হারালো। ইসলামের খেদমতে তার আজীবন নিবেদন, গবেষণা ও জ্ঞানচর্চা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার শূন্যতা ইসলামি বিশ্ব গভীরভাবে অনুভব করবে।”
তিনি প্রয়াত মুফতির আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের সদস্য ও অনুসারীদের প্রতি সমবেদনা জানান।
শেখ আবদুল আজিজ আল-শেখ: সংক্ষিপ্ত জীবনী
- জন্ম: ১৯৪৩ সালে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এক ধর্মপরায়ণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
- শিক্ষা জীবন: ১৯৬১ সালে ইমাম মোহাম্মদ বিন সাউদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ কলেজে ভর্তি হন।
- ডিগ্রি: ১৯৬৫ সালে আরবি ভাষা ও ইসলামি শরিয়াহ বিষয়ে বিশেষায়িত ডিগ্রি অর্জন করেন।
- পেশাগত জীবন: ১৯৯৯ সালে তিনি সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে দীর্ঘদিন তিনি মসজিদে নববী ও মসজিদে হারামে ফতোয়া প্রদানের দায়িত্বে ছিলেন।
- অবদান: সাধারণ ফতোয়া ও গবেষণা সংস্থার প্রধান, মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের সুপ্রিম কাউন্সিলের প্রধানসহ বহু আন্তর্জাতিক ইসলামি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তার কর্মজীবন ও অবদান
শেখ আবদুল আজিজ আল-শেখ ছিলেন ইসলামের একজন গভীর জ্ঞানী ও গবেষক। তার পুরো জীবন কেটেছে ইসলামি শরিয়াহ, ফতোয়া, গবেষণা এবং মুসলিম সমাজকে সঠিক পথে দিকনির্দেশনা দেওয়ার কাজে।
তিনি ছিলেন সুন্নি ইসলামের সালাফি মতাদর্শের প্রধান ধারক ও বাহক। তার ফতোয়া, বক্তব্য ও গ্রন্থাবলী মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় চিন্তাধারায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
তিনি কেবল সৌদি আরবের সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না; বরং মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের মুসলিম সমাজেও তার দিকনির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
বিশ্বব্যাপী ইসলামি গবেষকরা তার অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, আধুনিক সমস্যার সমাধান এবং শরিয়াহভিত্তিক সামাজিক নীতিমালার ক্ষেত্রে তার বক্তব্য বহু দেশে গবেষণার বিষয়বস্তু হয়েছে।
জাতিসংঘের ইসলামি সংলাপ কার্যক্রমেও তার বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছে। মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (OIC) এবং আন্তর্জাতিক ইসলামি গবেষণা সংস্থাগুলোতে তিনি বহু বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
মুসলিম উম্মাহর জন্য ক্ষতি
শেখ আবদুল আজিজ আল-শেখের মৃত্যুতে ইসলামি বিশ্বে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তিনি ছিলেন একাধারে আলেম, শিক্ষক, দার্শনিক এবং সমাজসেবক। তার গবেষণা ও লেখা এখনও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সৌদি আরব সরকার জানিয়েছে, তার জানাজা আগামীকাল মক্কার মসজিদুল হারামে অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলেম, রাষ্ট্রদূত ও মুসলিম নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ধর্মীয় সমাজের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। হেফাজতে ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষকরা বলেছেন—
“তিনি ছিলেন আধুনিক যুগে ইসলামি চিন্তার আলোকবর্তিকা। তার জীবনাদর্শ থেকে মুসলিমরা যুগ যুগ ধরে শিক্ষা গ্রহণ করবে।”
গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবদুল আজিজ আল-শেখের মৃত্যুতে শুধু সৌদি আরব নয়, সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এক মহান শিক্ষকের বিদায়ে শোকাহত। ইসলামের জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় তার অবদান চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার শূন্যতা পূরণ করতে হয়তো অনেক সময় লাগবে, তবে তার রেখে যাওয়া জ্ঞান, গ্রন্থ এবং দিকনির্দেশনা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করবে।
MAH – 12981 I Signalbd.com