
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তারিখ হঠাৎ পরিবর্তন এবং সম্ভাব্য বানচালের ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শিবিরের তরফে দাবি করা হয়েছে, নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে, যা ছাত্রসমাজের স্বাভাবিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম সাদ্দাম মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য রাকসু নির্বাচন বারবার একটি অদৃশ্য ইশারায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণা ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি যখন শেষ পর্যায়ে, তখন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করে প্রশাসন একটি বিশেষ দলের স্বার্থ বাস্তবায়ন করছে।”
শিবির নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী, নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারে প্রভাব ফেলা হচ্ছে। তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে, যা ছাত্ররাজনীতির স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতার প্রতি হুমকি।
প্রশাসনের অবস্থান ও কারণ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রশাসন নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কারণে নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা এবং নির্বাচনী শান্তি বজায় রাখার জন্য এই পরিবর্তন করা হয়েছে, তবে শিবির তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হিসেবে দেখছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা চাই শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারুক। কিছু অনিরাপদ পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে আমরা নির্বাচনের তারিখ সাময়িকভাবে পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য কোন বিশেষ দলের স্বার্থ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা।”
ছাত্ররাজনীতিতে ইস্যুটি বড় আন্দোলনে রূপ নিতে পারে
শিবিরের অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই বিষয়টি নিয়ে তীব্র আলোচনার শুরু হয়েছে। ছাত্ররাজনীতির বিভিন্ন সংগঠন এবং স্বাধীন ছাত্রনেতারা নির্বাচন পেছানোকে অবাঞ্ছিত এবং অস্বাভাবিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি প্রশাসন সময়মতো ব্যাখ্যা প্রদান না করে এবং ছাত্রনেতাদের সঙ্গে পরামর্শ না করে, তবে এটি বড় আন্দোলনে রূপ নিতে পারে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ ছাত্রনেতা বলেন, “ছাত্ররাজনীতিতে নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। যদি নির্বাচনের তারিখ হঠাৎ পরিবর্তন করা হয়, তাহলে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষের সৃষ্টি করবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্যও হুমকি।”
শিবিরের প্রতিবাদ ও কর্মসূচি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইতিমধ্যেই একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে যে, নির্বাচনের তারিখ পুনঃনির্ধারণ করা হোক এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হোক। শিবির আরও বলেছে যে, তারা প্রয়োজনে ধর্না, সমাবেশ এবং অন্যান্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের দাবির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেবে।
শিবির নেতারা বলেন, “আমরা আমাদের ভোটাধিকার রক্ষা করতে এবং রাকসু নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সকল ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব। এটি শুধু একটি নির্বাচন নয়, এটি শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াই।”
রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রেক্ষাপট
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্রে রয়েছে। এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্রী-ছাত্র সংগঠন সক্রিয়। রাকসু নির্বাচন শুধু শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচন নয়, বরং বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাবও এখানে প্রকাশ পায়।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “প্রতিটি নির্বাচনের পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থ থাকে। তবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা সব সময় সর্বোপরি থাকা উচিত। প্রশাসনের ভূমিকা যদি পক্ষপাতিত্বপূর্ণ হয়, তবে তা ছাত্ররাজনীতিতে অবাঞ্ছিত প্রভাব ফেলতে পারে।”
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। কেউ কেউ মনে করছেন প্রশাসন নিরাপত্তার দিক থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আবার কেউ কেউ বলছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা সবাই নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ দেখতে চাই। নির্বাচনের তারিখ হঠাৎ পরিবর্তন হলে আমাদের জন্য অনেক প্রস্তুতি নষ্ট হয় এবং আমাদের মতামতের মূল্য কমে যায়।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু নির্বাচন পেছানোর ঘটনা কেবল একটি নির্বাচনী তারিখ পরিবর্তনের ঘটনা নয়। এটি ছাত্ররাজনীতি, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সংগঠনগুলো এই ঘটনার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে এবং প্রতিটি পদক্ষেপকে পর্যবেক্ষণ করছে।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিবাদ, প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া, শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা এবং রাজনৈতিক প্রভাব একত্রে এই ঘটনা আরও বিতর্কিত ও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এই নির্বাচনের ফলাফল এবং তার প্রক্রিয়া ভবিষ্যতের ছাত্ররাজনীতি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বচ্ছতার দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
MAH – 12972 I Signalbd.com