বিশ্ব

জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশন: ফিলিস্তিন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও এসডিজি

Advertisement

আজ থেকে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনের মূল পর্ব। প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এই অধিবেশন বিশ্ব রাজনীতির প্রধান মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত হয়। আগামী শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে বিশ্বনেতাদের বিতর্ক পর্ব, যেখানে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে তাদের অবস্থান উপস্থাপন করবেন।

এই অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তব্য রাখবেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালিনা বেয়ারবক, যিনি এবারের অধিবেশনের সভাপতিত্ব করছেন। রীতি অনুযায়ী প্রথম ভাষণ রাখবে ব্রাজিল, এরপর পর্যায়ক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারতসহ অন্যান্য প্রধান দেশের নেতারা তাদের বক্তব্য রাখবেন। এই অধিবেশনে মোট ১৪০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করছেন।

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি: আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিষয়ে সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। এবারের সাধারণ অধিবেশনে এই বিষয়টি কেন্দ্রীয় আলোচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির বিষয়টি শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও শান্তি প্রক্রিয়ার উপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি নিলেই দীর্ঘদিনের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানে একটি নতুন দিক উন্মোচিত হবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: শান্তি ও নিরাপত্তার বড় চ্যালেঞ্জ

দ্বিতীয় আলোচিত বিষয় হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চলা এই সংঘাত এখনও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলি এই বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন।

বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো দেশগুলো শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং সংঘাত কমানোর উদ্যোগে সচেষ্ট, তবে রাশিয়ার অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া এই আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলছে। অধিবেশনের মূল পর্বে এই যুদ্ধের মানবিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন: গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়সমূহ

জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনের একাধিক সেশন টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে। বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, জ্বালানি সংকট এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে বিশদ আলোচনা করবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জ্বালানি সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এখন অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বনেতারা এই অধিবেশনে গ্রিন টেকনোলজি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক সমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন।

বিশ্বজুড়ে অংশগ্রহণ: কূটনীতি ও সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম

৮০তম সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বের ১৪০টি দেশের প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। এটি একটি অনন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চ, যেখানে দেশগুলো কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে এবং বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান খুঁজতে পারে।

প্রতিনিধিরা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য রাখবেন, যেমন:

  • আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা
  • খাদ্য নিরাপত্তা ও জ্বালানি সংকট
  • মানবাধিকার ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য
  • প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন

এছাড়াও, এই অধিবেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক, চুক্তি স্বাক্ষর এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ থাকবে।

প্রথম দিন: উদ্বোধনী বক্তব্য ও প্রধান ভাষণসমূহ

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালিনা বেয়ারবক বিশ্বনেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আজ আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মুখোমুখি। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, শান্তি ও টেকসই উন্নয়নকে সামনে রেখে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

এরপর ব্রাজিল প্রথম ভাষণ রাখে, যেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা এবং সামাজিক উন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন এবং রাশিয়া পর্যায়ক্রমে তাদের বক্তব্যে বর্তমান বৈশ্বিক সংকট, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তুলে ধরেছেন।

বিশেষ ফোকাস: জ্বালানি সংকট ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার

এই অধিবেশনে জ্বালানি সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৫ সালে জ্বালানি সংকট বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সমাধান এবং সহায়তা প্রয়োজন।

জলবায়ু পরিবর্তন: বিশ্ব নেতাদের অঙ্গীকার

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সেশনগুলোতে বিভিন্ন দেশ পরিবেশবান্ধব নীতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনা এবং গ্রিন প্রযুক্তির প্রসার নিয়ে আলোচনা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, “যদি এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হবে।”

সমাপ্তি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনের মূল পর্ব ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। এরপর বিভিন্ন উপসেশন এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অধিবেশনের সিদ্ধান্তগুলো বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।

বিশ্ব নেতারা একত্রে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন। বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী, এই অধিবেশন আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার নতুন দিক উন্মোচন করবে।

MAH – 12966 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button