জাতীয়

সোশ্যাল বিজনেস ইয়ুথ অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষ্ঠানে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা

Advertisement

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে অংশ নিতে। সফরের অংশ হিসেবে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘সোশ্যাল বিজনেস ইয়ুথ অ্যান্ড টেকনোলজি’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে তিনি বিশেষ বক্তৃতা দেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ: রোহিঙ্গা, জলবায়ু ও বৈশ্বিক অর্থনীতি

ড. ইউনূস তার বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশের জন্য এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের পথ সহজ নয়। বর্তমানে দেশে ১৩ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে, যাদের সুরক্ষা ও জীবনধারণের দায়িত্ব বহন করছে বাংলাদেশ। এই সংকট শুধু মানবিক ইস্যুই নয়, বরং এটি দেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং সামাজিক কাঠামোর উপরও বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে।

এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ বারবার ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

অন্যদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতি বর্তমানে অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি, খাদ্যশস্য এবং ডলারের দামের অস্থিরতা বাংলাদেশের আমদানি নির্ভর অর্থনীতিকে বিপদে ফেলছে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের বাজেট কমানো বা উন্নয়ন সহায়তা হ্রাস করা মোটেও সমাধান নয়, বরং তা উল্টো প্রভাব ফেলবে। এখনই সময় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করার, প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করার এবং দুর্বল দেশগুলোর জন্য ন্যায়সংগত উত্তরণের পথ তৈরি করার।”

তিনি আরও যোগ করেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে যদি এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থিতিশীলভাবে উত্তরণের সুযোগ দিতে হয়, তবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে দায়িত্বশীল হতে হবে।

সাহস, পদক্ষেপ ও প্রতিশ্রুতির বার্তা

ড. ইউনূস তার বক্তৃতায় তরুণ প্রজন্মের ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,
“একটি উন্নত বিশ্বের পথ অতীতের ব্যর্থতায় মাপা যাবে না। এটি গড়ে উঠবে আজকের সাহস, আজকের পদক্ষেপ এবং পরিবর্তনের প্রতি আজকের অবিচল প্রতিশ্রুতিতে।”

তিনি সোশ্যাল বিজনেস, নতুন বহুপাক্ষিক কূটনীতি, গভীর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথাও জোর দিয়ে বলেন।

‘সোশ্যাল বিজনেস ইয়ুথ অ্যান্ড টেকনোলজি’ আসলে কী?

এই সাইড ইভেন্টটি মূলত তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার প্ল্যাটফর্ম। এখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

সামাজিক ব্যবসা ধারণাটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসই প্রথম বিশ্বে পরিচিত করেন। মুনাফা নয়, বরং সামাজিক সমস্যা সমাধানকেই এই ব্যবসার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ধরা হয়। তার মতে, তরুণদের সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির শক্তিকে ব্যবহার করেই বিশ্বকে একটি অধিক ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব

সফরসঙ্গীদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতারা

প্রধান উপদেষ্টার এ সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন দেশের শীর্ষ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন—

  • মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (বিএনপি মহাসচিব)
  • হুমায়ুন কবির (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা)
  • সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের (জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর)
  • আখতার হোসেন (জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি সদস্য সচিব)
  • ডা. তাসনিম জারা (জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক)
    এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধি দলে যোগ দিয়েছেন জামায়াত নেতা নকিবুর রহমান তারেক

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের এই নেতাদের একসঙ্গে সফরে যাওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে।

আন্তর্জাতিক মহলে বার্তা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল বিজয়ী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বপরিসরে পরিচিত নাম। তার প্রতিটি বক্তব্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিশেষ গুরুত্ব পায়। এবারের সফরে তার আলোচনায় রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহযোগিতা ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়গুলো উঠে আসায় বাংলাদেশ আবারও আন্তর্জাতিক আলোচনায় এসেছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানেই ঠিক হবে আগামী দিনে উন্নয়ন সহযোগিতা, জলবায়ু তহবিল এবং আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশের অবস্থান কতটা শক্তিশালী হবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তৃতা শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং সমগ্র উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্যও একটি দিকনির্দেশক বার্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

MAH – 12958 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button