আঞ্চলিক

কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ৩২ জনকে সতর্ক

Advertisement

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩২ জন শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটি একাধিক সভা ও তদন্ত শেষে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের কাছে যথাযথ নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকমণ্ডলীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত

ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এমএসসি শিক্ষার্থী সালিম সাদমানকে এক বছরের জন্য, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২৩ ব্যাচের ওমর বিন হোসাইন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২১ ব্যাচের শান্ত ইসলাম ও মো. রিদয়, এবং ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২ ব্যাচের সাফওয়ান আহমেদ ইফাজকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হবে।

সতর্ক করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন, যারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ পেয়েছেন।

তদন্ত প্রক্রিয়া

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি ৯৮তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ভিডিও ফুটেজ, অভিযোগনামা, কারণ দর্শানোর নোটিশ ও শিক্ষার্থীদের জবাব পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন দাখিল করে।

পরবর্তী সময়ে ২৫ থেকে ২৭ আগস্ট এবং ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটি একাধিক সভায় তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে। সর্বসম্মতিক্রমে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তি আরোপ করা হয়।

সংঘর্ষের ঘটনা

১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বহিরাগতদের সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে কয়েকজন শিক্ষকও লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় শিক্ষকমণ্ডলী দীর্ঘদিন ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে প্রতিবাদ জানান।

শিক্ষকরা দাবি করেন, যারা লাঞ্ছনার সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

এই সিদ্ধান্তের পর বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকমণ্ডলীর মধ্যে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রশাসন মনে করছে, শৃঙ্খলা রক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ বৃদ্ধিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

অপরদিকে, কিছু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন। তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

তুলনা ও প্রাসঙ্গিক তথ্য

বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে কুয়েটের ঘটনা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে কারণ এতে শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন এবং শৃঙ্খলা কমিটি সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে।

ছাত্রশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্য হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

শিক্ষাবিদ ও শিক্ষানীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য। তারা মনে করেন, প্রশাসনের এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।

বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেছেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের মধ্যেই দায়িত্ববোধ ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তবে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া উপায় নেই।

কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ও সতর্ক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত পরিবেশের জন্য সতর্কবার্তা। এটি দেখায় যে প্রশাসন শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় এবং সচেতনতার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব। এখন দেখার বিষয়, শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সতর্কবার্তা মেনে চলবে কিনা।

এম আর এম – ১৪৬৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button