বাংলাদেশ

শক সিনড্রোমে মারা যাচ্ছেন বেশিরভাগ ডেঙ্গু রোগী: স্বাস্থ্য অধিদফতর

Advertisement

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। এডিস মশাবাহিত এই রোগে মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক ঘটনা এই জটিল অবস্থা থেকেই ঘটেছে। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এই পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায়, রোগীরা প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা না পেয়ে জটিল অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, যা মৃত্যুহার বাড়িয়ে দিচ্ছে।

মৃত্যুর পরিসংখ্যান

স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ১১৩ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ জনের মৃত্যু ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে (ডিএসএস) হয়েছে, আর জটিল উপসর্গে (ইডিএস) ৩৬ জন মারা গেছেন।

অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়েছে: ডেঙ্গু হেমোরেজিক সিনড্রোমে (ডিএইচএস) একজন, ডিএসএস ও ইডিএস উভয়ের জটিলতায় ৯ জন, অঙ্গ বিকলজনিত জটিলতায় ৫ জন এবং হৃদযন্ত্রের শকে আক্রান্ত হয়ে ৬ জন।

এই পরিসংখ্যান দেখায়, প্রাথমিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে রোগীরা শুরুর দিকে অবস্থার অবনতি হলে মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

চিকিৎসা দেরির প্রভাব

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, “ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু বরণ করেছেন। রোগীরা প্রায়শই দেরিতে হাসপাতালে আসছেন, ফলে চিকিৎসা প্রদানের যথাযথ সুযোগ কমে যাচ্ছে।”

তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, সময়মতো চিকিৎসা না পেলে ডেঙ্গু রোগের জটিলতা বাড়ে এবং মৃত্যুহার বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিবছর একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। এডিস মশা দ্বারা সংক্রমিত এই রোগ শুরুর দিকে সাধারণ জ্বর, মাথাব্যথা ও মাংসপেশির ব্যথার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসা না পাওয়া বা দেরিতে চিকিৎসা শুরু হলে রোগীরা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বা ডেঙ্গু হেমোরেজিক সিনড্রোমের মতো জটিল অবস্থায় পৌঁছে। এতে মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও প্রস্তুতি

ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর হার কমাতে স্বাস্থ্য অধিদফতর বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ এবং যথাযথ মেডিকেল সরঞ্জাম রাখা হচ্ছে।

সচেতনতা বৃদ্ধি ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণের জন্য জনসাধারণকে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তিই রোগীর জীবন বাঁচানোর মূল চাবিকাঠি।

জনসচেতনতা ও প্রতিক্রিয়া

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের পরিবারের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, অনেক সময় তারা প্রাথমিক উপসর্গকে হালকাভাবে নেন। যার ফলে রোগী হাসপাতালে দেরিতে পৌঁছান।

সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর সচেতনতা প্রচার চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ না করলে শক সিনড্রোম ও অন্যান্য জটিলতার কারণে মৃত্যু বৃদ্ধি পায়।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

একজন রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ বলেন, “ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে শক সিনড্রোম হলো সবচেয়ে প্রাণঘাতী। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীদের পর্যবেক্ষণ এবং নির্ভুল চিকিৎসা নিশ্চিত না করলে মৃত্যুহার কমানো কঠিন। দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াই একমাত্র জীবনরক্ষাকারী উপায়।”

তারা আরও সতর্ক করেছেন যে, শারদীয় বর্ষার সময় এবং গ্রীষ্মে মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই রোগী ও পরিবার উভয়কেই আগে থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের কারণে মৃত্যুহার বৃদ্ধি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতার গুরুত্ব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিশ্চিত করা হলে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মরশুমে সবাইকে সতর্ক থাকা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। এখন দেখার বিষয়, কতটা কার্যকরভাবে জনসচেতনতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা রোগী জীবন রক্ষা করতে পারে।

এম আর এম – ১৪৬৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button